প্রতীকী ছবি।
যমজ দুই ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল নৈহাটির গরিফার নেতাজি সুভাষ মোড় এলাকায়। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির শোওয়ার ঘর থেকে উদ্ধার হয় তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় (৫০) নামে এক প্রৌঢ়ের দেহ। তার ঘণ্টা দুয়েক পরেই গরিফা স্টেশনের কাছে রেললাইনের ধার থেকে তরুণবাবুর ভাই অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৫০) রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। রহস্যজনক এই দুই মৃত্যুর পিছনে কারণ কী, তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, দুই ভাই-ই আত্মঘাতী হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণবাবু ও অরুণবাবু ছোটবেলা থেকেই ছিলেন হরিহর আত্মা। তাঁদের ফ্লেক্স ছাপানোর পারিবারিক ব্যবসা ছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, করোনাকালে লকডাউনের পরে সেই ব্যবসায় মন্দা চলছিল। তার উপরে সম্প্রতি মায়ের মৃত্যুর পরে দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। আর্থিক অনটনের জন্য প্রায়ই তাঁদের মধ্যে অশান্তি হত। গত এক সপ্তাহ ধরে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা বলাও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তরুণবাবুদের এক আত্মীয় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে মাঝেমধ্যে গন্ডগোল হত। আমি ওদের আগের মতোই মিলেমিশে থাকার জন্য বলেছিলাম। তরুণের ঝুলন্ত দেহ দেখে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অরুণ। পরে শুনি, রাতে রেললাইনের ধারে ওর দেহ পাওয়া গিয়েছে।’’ প্রতিবেশীরা জানান, যে ঘর থেকে তরুণবাবুর দেহ উদ্ধার হয়, তার পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন অরুণবাবু। সন্ধ্যায় এক জন এসে ডাকাডাকি করায় তিনি ঘুম থেকে উঠে ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখে কিছু ক্ষণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। তার পরেই ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোবিদ কৌস্তুভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবসাদ থেকেই মানুষ আত্মহত্যা করে। এর সঙ্গে সামাজিক প্রেক্ষিত তো থাকেই। যে হেতু ওই দুই ভাই যমজ, তাঁদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন অনেক বেশি ছিল। সেই কারণেই এক ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ চোখের সামনে দেখে সহ্য করতে না পেরে আর এক জনের আত্মহত্যার পথ বাছা স্বাভাবিক। তবে, আমাদের দেশে মনস্তাত্ত্বিক ময়না-তদন্ত হলে সঠিক কারণটা জানা সম্ভব হত।’’