দূষণ: নিকাশি নালায় পড়ছে বর্জ্য। নিজস্ব চিত্র।
দূষণ ঠেকাতে মামলা চলছে। তার উপর হোটেলের বর্জ্য অপসারণ নিয়ে নতুন জট তৈরি হয়েছে বকখালিতে। গত ১১ মাস ধরে মাইনে না পাওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জঞ্জাল থেকে সার তৈরি প্রকল্পে যুক্ত কর্মীরা। ফলে বকখালিতে এখন প্রায় ৫৪টি হোটেলের রোজকার বর্জ্য মিশছে সমুদ্রেরই। দূষণ বাড়ছে জেলার অন্যতম এই পর্যটনকেন্দ্রে।
এই পর্যটনকেন্দ্রকে দূষণমুক্ত রাখতে জঞ্জাল থেকে জৈব সার তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। বকখালির অমরাবতিতে এই কাজের জন্য ৯ জন কর্মীকে নিযুক্ত করা হয়। তাঁদের মাসে মাইনে দিতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তা দেওয়া হতো পঞ্চায়েত সমিতি থেকে। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ওই সব কর্মীরা মাইনে পাচ্ছেন না। তাঁদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লক্ষ টাকার কাছাকাছি। প্রকল্পের কর্মী শঙ্কর মণ্ডল, মিহির মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এক বছর মাইনে পাইনি। কাজ আপাতত বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর আগেও পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক অফিস থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল মাইনে দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি।’’ কর্মীদের বকেয়া মেটাতে ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকদের উপর পঞ্চায়েত সমিতি বাড়তি টাকার বোঝা চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ।
উপকূল নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, জোয়ারের সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও কংক্রিটের নির্মাণ থাকবে না। কিন্তু বকখালিতে দূষণের মানচিত্রই তৈরি হয়নি। তাই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে এখনও পরিবেশের ছাড়পত্র পায়নি অনেকগুলি হোটেল। তাই তা নিয়ে এমনিতেই চাপে রয়েছে অনেক হোটেল। তার মধ্যে নতুন বিপত্তি জঞ্জাল অপসারণ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বকখালিতে ৫৪টি হোটেল, সমুদ্র সৈকত এবং বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া প্রায় আড়াইশো দোকানপাট থেকে রোজ জঞ্জাল সংগ্রহের কাজ হতো। এখন সেগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেলের কর্মীরা নিজেরাই আশপাশের খাল, নিকাশি নালা ও জঙ্গলের মধ্যেই ফেলছেন প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট, শালপাতা থেকে শুরু করে হোটেল ও দোকানপাটের নানা বর্জ্য। কিন্তু সেগুলির সঙ্গে সমুদ্রের যোগ থাকায় সমস্ত বর্জ্য মিশছে সাগরের জলে। বকখালিতে রোজ প্রায় ৩ কুইন্টাল বর্জ্য উৎপাদন হয়। সেগুলি থেকে সার তৈরি করে বিক্রি করার কথা। বকেয়া না পাওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন কর্মীরা। ফলে নতুন করে জৈব সার তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখনও প্রায় ১০ কুইন্টাল জৈব সার জঞ্জাল বাছাই কেন্দ্রে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
এই জটিলতা কাটাতে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীদের একটি বৈঠকে ডেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কর্মীদের মাইনের ভার নিতে হবে তাদেরকেই। দু’টি ব্যবসায়ী সমিতি ও দু’টি হোটেল মালিক সংগঠনের কাছে মাসে ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। যদিও তাতে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশই অরাজি। বকখালি ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের নেতা জয়কৃষ্ণ পাত্র বলেন, ‘‘ব্যবসার অবস্থা ভাল নয়। ৫ হাজার করে দিতে পারব না। আমরা সাধারণ সভায় বলেছি, ২ হাজার টাকা দেব।’’ হোটেল মালিকেরাও জানিয়েছেন, এমনিতেই প্রতিটি হোটেলে পর্যটক পিছু ৫ টাকা করে দেওয়া হয়। তার বাইরে আবার টাকা দীর্ঘদিন দেওয়া সম্ভব নয়। হোটেল মালিকদের একটি সংগঠনের নেতা অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিন মাস আমাদের সংগঠন ৫ হাজার টাকা করে দেবে। কিন্তু তারপর গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদকে দায়িত্ব নিতে হবে।’’
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত মালি বলেন, ‘‘সরকার এক বছর চলার মতো খরচ দিয়েছিল। এখন বাড়তি কর বসিয়েই এই প্রকল্প চালাতে হবে। তার জন্য চেষ্টা করছি। সমাধান হয়ে যাবে।’