বাসন্তী রাজ্য সড়কে চরছে গরু। রাস্তায় অনেক জায়গায় স্পিডোমিটার লাগানো থাকলেও তা অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
ঝাঁ চকচকে রাস্তায় বেড়েছে গাড়ির গতি। এ দিকে, রাস্তায় রয়েছে বিপজ্জনক সব বাঁক। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এমনই অবস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসন্তী রাজ্য সড়কের। এই রাস্তার পাশ দিয়ে গিয়েছে ভাঙড়ের কুলটি বাগজোলা খাল। বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে, বিপজ্জনক বাঁকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়েছে। বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
কলকাতার সায়েন্স সিটি থেকে বাসন্তী পর্যন্ত বাসন্তী রাজ্য সড়ক প্রায় ৯০ কিলোমিটার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আনন্দপুর, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স, ভাঙড় ও বাসন্তী থানার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার উপর দিয়ে গিয়েছে এই পথ। এর মধ্যে ভাঙড়ের ঘটকপুকুরথেকে সায়েন্স সিটি পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রাস্তা সব থেকে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ।
কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার ট্রাফিক গার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে এই থানা এলাকায় বাসন্তী রাজ্য সড়কে ১৫-১৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। গুরুতর জখম ১২ জন। ভাঙড় থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই থানা এলাকায় বাসন্তী রাজ্য সড়কে গত ছ’মাসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। জখম ১৬ জন।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বাসন্তী রাজ্য সড়ক সন্ধ্যার পর থেকে অন্ধকারে ডুবে থাকে। যদিও অতীতে বেশ কিছু দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ড ভিআইপি ব্রিজ থেকে ভোজেরহাট পর্যন্ত বাসন্তী রাজ্য সড়কের পাশে বাতিস্তম্ভ লাগিয়েছে। তবে ভোজেরহাট থেকে বাসন্তী পর্যন্ত প্রায় গোটা সড়ক সন্ধ্যার পর থেকে অন্ধকারে ডুবে যায়। স্থানীয় মানুষের আরও অভিযোগ, বাসন্তী রাজ্য সড়কের দু’পাশে অনেক জায়গায় সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে হোটেল, রেস্তরাঁ, ধাবা। রাতে মালবাহী গাড়ি সহ অন্যান্য যানবাহন রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করায়। গাড়ির যাত্রী, চালকেরা খাওয়া-দাওয়া করেন। একে সঙ্কীর্ণ রাস্তা, তার উপরে, রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করানোর ফলেও ঘটছে দুর্ঘটনা।
রাজ্য সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে দোকান-বাজার। কাঁটাতলা, কড়াইডাঙা এলাকায় অনেক সময়ে দেখা যায়, গরুর পাল রাস্তার উপরে চরে বেড়াচ্ছে। দ্রুতগতির গাড়ির সামনে গরু চলে আসায় দুর্ঘটনা ঘটেছে একাধিক।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাস মণ্ডল, প্রভা ঘোষেরা বলেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, বাসন্তী রাজ্য সড়ক সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে রাস্তা সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিপজ্জনক বাঁকগুলি বদলে সোজা করে দিতে হবে। তা হলেই বহু দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।’’
কলকাতা ট্রাফিক গার্ডের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা রুখতে অতীতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। রাস্তার পাশে বাতিস্তম্ভ লাগানো, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্পিডোমিটার, স্পিড ব্রেকার, সোলার ভিনটার, সতর্কীকরণ বোর্ড, ক্রাস বেরিয়ার, যান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, যাতে দ্রুতগতির গাড়িকে চিহ্নিত করা যায়।
তারপরেও কী ভাবে এত দুর্ঘটনা ঘটছে?
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। রাতের দিকে পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে বাসন্তী রাজ্য সড়কে অনেকে বেরিয়ে পড়েন ‘জয় রাইডে।’ রাতে মোটরবাইক রেসিংও দেখা যায়। বছরখানেক আগে মোটরবাইক রেসিং করতে গিয়ে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার বানতলার আগে একটি ফাঁকা জায়গায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা মেরে মৃত্যু হয় তিন যুবকের।
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ডের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগের তুলনায় বাসন্তী রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমেছে। আমরা দুর্ঘটনা রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছি। তা সত্ত্বেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে মানুষকে সচেতন করতে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ সহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করছি।’’ বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভাঙড় থানা এলাকায় বাসন্তী রাজ্য সড়কের উপরে যানবাহনের গতি রোধ করতে ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়েছে। ঘটকপুকুর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পুলিশের নজরদারি পাশাপাশি দ্রুতগতির গাড়িকে মামলা দেওয়া থেকে শুরু করে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। আগের তুলনায় দুর্ঘটনা অনেকটা কমানো সম্ভব হয়েছে।’’