নদীর চরে আটকে ভেসেল। — নিজস্ব চিত্র।
কাকদ্বীপের মুড়িগঙ্গা নদীতে ভাটার জেরে ভোগান্তিতে পড়লেন পুণ্যার্থী ও নিত্যযাত্রীরা। রবিবার সকাল থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা বন্ধ ছিল। বিকেলে সাড়ে ৪টের পরে আবার বন্ধ হয়ে যায় ভেসেল চলাচল।
শ্রাবণ মাস জুড়ে ভিন্ রাজ্যের পুণ্যার্থীরা আসেন কপিলমুনি মন্দিরে। এই সময়ে ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। এ দিনও প্রচুর মানুষ গঙ্গাসাগরে যাবেন বলে কাকদ্বীপে আসেন। ভেসেল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বাড়ে। সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরাও। কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটে যাত্রীদের লাইন পড়ে যায়। বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অভিযোগ, ভিড় সামাল দিতে কোনও পুলিশকর্মীও ছিল না। বিহার থেকে আসা এক পুণ্যার্থী বলেন, “এখানে এত মানুষের জমায়েত, কিন্তু প্রশাসনের কোনও লোক নেই। পরিষেবা ঠিক নেই। কোনও বিপদ হলে দেখার কেউ নেই। ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। পানীয় জলেরও কোনও ব্যবস্থা নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সমস্যা এখন নিত্য দিনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভেসেল চলাচলে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে মুড়িগঙ্গা। প্রায় তিন কিলোমিটার চওড়া এই নদীর মাঝে পলি জমে বহু চর তৈরি হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলার আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ড্রেজিং করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, মাস ছ’য়েকের মধ্যেই ভোগান্তি বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাটার সময়ে নদী পেরোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই নদীর চরে যাত্রী বোঝাই ভেসেল আটকে যাচ্ছে। জোয়ার এসে জল না বাড়া পর্যন্ত চরে আটকে থাকতে হচ্ছে। প্রতি দিন ১৬ ঘণ্টা করে ভেসেল চলাচল করার কথা থাকলেও, গড়ে তিন-চার ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ দিন যেমন প্রায় আট ঘণ্টা ভেসেল বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সাগরদ্বীপ থেকে ধান, পান-সহ মরসুমের আনাজ আসে কাকদ্বীপ বাজারে। রুজি-রুটির টানে কাকদ্বীপে আসেন এলাকার মানুষ। যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণের জন্য ভেসেলই একমাত্র ভরসা। মুমূর্ষু রোগীদেরও নদী পেরিয়ে আনতে হয়। বাসিন্দাদের দাবি, বছরের পর বছর নাজেহাল হতে হচ্ছে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থানীয় সমাধান হচ্ছে না। এ বছরই গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে এসে মুড়িগঙ্গা নদীতে সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই কাজও এগোয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ দাস বলেন, “সেতু হলে মানুষের এত ভোগান্তি হত না। রোগী থেকে নিত্যযাত্রী, পুণ্যার্থী— সকলেই ভোগান্তির শিকার। মেলা এলে প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। তারপরে আর দেখা যায় না।”
স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজার বলেন, “নদীতে চর থাকায় সমস্যা হচ্ছে। পেরোতে বেশি সময় লাগছে। মাঝে মধ্যে মাঝ নদীতে ভেসেল আটকে যায়। ফের ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য সেচ দফতরকে বলেছি।”