পেটের গোলমাল, ডায়েরিয়া ভোগালে কী করা উচিত? শুনে নিন চিকিৎসকদের পরামর্শ। ফাইল চিত্র।
পেটের সমস্যায় জর্জরিত অধিকাংশ মানুষই। গ্যাস, অম্বল, পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য— রোগের শেষ নেই। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস-অম্বলের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার উপর গরম পড়লেই ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়াদের প্রকোপ বেড়ে যায়। কখনও খাবারের মাধ্যমে, আবার কখনও জলবাহিত হয়ে সেই সব জীবাণু ঢুকে পড়ে শরীরে এবং খাদ্যনালিতে সংক্রমণ ঘটায়। গরমে ঘেমেনেয়ে ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক বা খাওয়াদাওয়ার সামান্য অনিয়ম— এ সবের হাত ধরেই জীবাণু সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকে। শিশু ও বয়স্কদের এই সময়টায় পেটের সমস্যা বেশি ভোগায়। তাই সুস্থ থাকতে কী করা উচিত আর কী নয়, জেনে নিন চিকিৎসকদের কাছ থেকে।
গরমে ডায়েরিয়ার মতো অসুখে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। ছোটদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও কম থাকে। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও সময়মতো চিকিৎসা শুরু না করলে এই অসুখ মারাত্মক আকার নিতে পারে। এমনটাই মত মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকাদের। তিনি বলেন, “ইকোলাই, সালমোনেল্লা, ভিব্রিয়ো কলেরির মতো একগুচ্ছ ভাইরাস দাপট দেখায় এই সময়ে। সর্দিকাশির অ্যাডেনোভাইরাস তো আছেই, সেই সঙ্গে রোটাভাইরাসও পেটের গোলমালের জন্য দায়ী।” ইদানীংকালে নোরোভাইরাসের উপদ্রবও বেড়েছে বলে জানালেন চিকিৎসক। সে কারণে পেটের গোলমাল মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। ‘স্টমাক ফ্লু’-তে আক্রান্ত হচ্ছে ছোটরা। ঘন ঘন জ্বর এবং পেটে ব্যথার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
মুখ থেকে শুরু করে খাদ্যনালি, পেট, অন্ত্র হয়ে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক্ট’। এই পথ পরিষ্কার রাখলেই পেট ভাল থাকবে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস, শরীরচর্চার অভাবেই অন্ত্রের পথে যত গন্ডগোল হচ্ছে। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তাঁর কথায়, “অন্ত্রের নিজস্ব কিছু রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা আছে। রয়েছে কিছু উপকারী অণুজীব, যা বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে শরীর সুস্থ রাখে। এই ভাল-খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সমতা নষ্ট হলেও কিন্তু অন্ত্রে সমস্যা হয়। অন্ত্রে সংক্রমণ হলে তাকে ‘ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস’ বলা হয়। সহজ কথায়, পেটের ভিতর ভাইরাসের সংক্রমণ। ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাসই অন্ত্রের ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলিকে নষ্ট করে দেয়। গরমের সময়ে রাস্তার ভাজাভুজি বা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার অভ্যাস বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলে।”
সুস্থ থাকতে কী করণীয়?
১) ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ— খাওয়া যেতে পারে সবই। তবে কম তেলে রান্না খাবার খেতে হবে। বেশি করে সবুজ শাকসব্জি ও ফল খেতে হবে।
২) খাদ্যতালিকায় তাই রাখতে হবে সবুজ শাক, আনাজপাতি, টাটকা ফল। পালং শাক, ব্রকোলি, বাঁধাকপি খাওয়া ভাল। ফলের মধ্যে কলা, আঙুর কমলালেবু, নানা ধরনের বেরিজাতীয় ফল ইত্যাদি রাখতে পারেন।
৩) সকালে খালি পেটে চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। ব্ল্যাক কফি বেশি খেলেও পেটের সমস্যা হবে।
৪) গরমের সময়ে পেটের গোলমালের সঙ্গে জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা ভোগায়। তাই এই সময়টায় বেশি করে জল খেতে হবে। সকালে খালি পেটে মৌরি-মেথি ভেজানো জল বা জিরে ভেজানো জল খেলেও পেট ঠান্ডা থাকবে।
৫) ছোটদের জল ফুটিয়ে খাওয়ানোই ভাল। আর রাস্তা থেকে শরবত, লস্যি, লেবুর জল বা কোনও রকম ঠান্ডা পানীয় খাওয়া উচিত হবে না।
৬) খাবার বেশি ক্ষণ ফেলে রাখবেন না। গরম অবস্থাতেই খান। ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করে তবেই খান। বাসি খাবার না খাওয়াই ভাল। কারণ ফ্রিজে রাখা খাবারেও কিছু ব্যাক্টেরিয়া জন্মায় যা ডায়েরিয়ার সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
৭) রাস্তার কাটা ফল খাবেন না। গোটা ফল কিনে ভাল করে ধুয়ে, তবে খান।
৮) ডায়েরিয়ার চিকিৎসায় ওআরএস ছাড়া অন্য কিছুর প্রয়োজন পড়ে না বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যে পরিমাণ জল শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তার ঘাটতি পূরণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত ফর্মুলা মেনে তৈরি ওআরএস দিতে হবে। তা না পাওয়া গেলে এক গ্লাস জলে এক চামচ চিনি ও এক চিমটে নুন মিশিয়ে সেই মিশ্রণও দেওয়া যেতে পারে।
তবে মলের সঙ্গে রক্ত বেরোলে, ঘন ঘন বমি হতে থাকলে এবং প্রচণ্ড ঝিমুনি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।