হাতে-হাতে: ছিঁড়ে যাওয়া জাল মেরামতিতে নেমে পড়লেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি তুলেছেন প্রসেনজিৎ সাহা
ত্রাণ নয়, কংক্রিটের নদীবাঁধ চাই— বনমন্ত্রীকে ঘিরে এমনটাই দাবি জানালেন সুন্দরবনবাসী।
বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়ার জটিরামপুরে আসেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বন দফতরের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়। জটিরামপুর খেয়া ঘাটে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করকে সঙ্গে নিয়ে ত্রাণ বিলি করেন বনমন্ত্রী। সেখানেই স্থানীয় মানুষ রাজীবকে ঘিরে সুন্দরবনে কংক্রিটের স্থায়ী নদীবাঁধের দাবি জানাতে থাকেন। এর আগে সেচ দফতরের মন্ত্রী থাকাকালীন রাঙাবেলিয়া এসেছিলেন রাজীব। কংক্রিটের বাঁধ তৈরির জন্য এলাকা পরিদর্শনও করেন। তবে সেই বাঁধ আজও তৈরি হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রফুল্ল মণ্ডল, বনমালি সর্দাররা বলেন, “আয়লার সময়ে আমাদের বাড়িঘর সব নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। এ বারও আমপান ঝড়ে রাঙাবেলিয়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। বহু কৃষিজমিতে নোনা জল ঢুকে চাষের ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে স্থায়ী নদীবাঁধ প্রয়োজন। না হলে অচিরেই সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।”
২০০৯ সালে আয়লার পরে ৩৫০০ কিলোমিটার কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির জন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল। কিন্তু ২০০ কিলোমিটার নদীবাঁধ তৈরির পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই প্রকল্পে আর বাঁধ তৈরির কাজ হবে না বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। এ বিষয়ে রাজ্যের সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “কেন্দ্র এই প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই কাজ বন্ধ আছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, সুন্দরবনের যে যে দ্বীপে বিক্ষিপ্ত ভাবে কংক্রিটের বাঁধের কাজ হয়েছিল, সেই এলাকায় তেমন ভাবে ক্ষতি হয়নি। প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “এই প্রকল্পে কাজের জন্য কেন্দ্র সরকার ৭৫ শতাংশ অর্থ দিয়েছিল। রাজ্যকে দিতে হত ২৫ শতাংশ অর্থ। রাজ্য সরকার সেই অর্থ জমা না দেওয়ায় এবং প্রকল্পের ব্যাপারে তদ্বির না করায় পুরো প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে বনমন্ত্রী বলেন, “আমি যখন সেচমন্ত্রী ছিলাম, তখন আয়লা নদী বাঁধ প্রকল্পে প্রায় ১০০ কিলোমিটার কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হয়েছিল এবং ৩০০ কিলোমিটার পাকা বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। পরে কেন ওই কাজ থমকে গিয়েছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা করব।”
আমপানের তাণ্ডবে সুন্দরবন এলাকায় লোকালয়ে বাঘ ঢোকা আটকাতে বন দফতরের লাগানো অধিকাংশ নাইলন ফেন্সিং নেট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমপান তাণ্ডবে সুন্দরবনের ১০৫ কিলোমিটার ফেন্সিং নেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিন বনমন্ত্রী পিরখালি জঙ্গল ও সজনেখালি জঙ্গলে বনকর্মীদের উৎসাহ দিতে জঙ্গলে নেমে নাইলন ফেন্সিং লাগানোর কাজে হাত লাগান। বনকর্মীদের সঙ্গে তিনি বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন।
পরে রাজীব জানান, ড্রোন উড়িয়ে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। দেখা গিয়েছে কোনও বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি। আমপানের তাণ্ডবে সুন্দরবনের গ্রামীণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যানগ্রোভ জঙ্গল পুরোপুরি অক্ষত রয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “সুন্দরবন না বাঁচলে কলকাতা বাঁচবে না। তাই সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমরা একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি। আগামী দিনে আমরা দশ লক্ষ ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।” এ দিন বনমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ, ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের ফিল্ড ডিরেক্টর সুধীরকুমার দাস প্রমুখ।