জলের অভাব চিচিঙ্গা, লঙ্কা চাষে সমস্যা। ভাঙড়ের গ্রামে
এ বছর শীতকাল পেরিয়েছে বেশ রুখা-সুখা ভাবেই। বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এর ফলে শীতকালে ঠান্ডা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি ও চাষবাসের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে।
বৃষ্টির অভাবে রবিশস্য ও গ্রীষ্মকালীন আনাজের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আনাজ বাজারে জোগান কম থাকায় দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্তেরা। অন্য বছরের মতো এ বার শীতের মরসুমে বৃষ্টি হয়নি দুই ২৪ পরগনায়। ফলে সেচের বেশি জল কিনতে হয়েছে চাষিদের। ডিজ়েলের দাম বাড়ায় জলের দাম ও ফসল উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির অভাবে লঙ্কা, ক্যাপসিকাম, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, কুমড়ো, টোম্যাটো, চিচিঙ্গা, পটল, ঝিঙে, বরবটি, আম-সহ বিভিন্ন আনাজ ও ফলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাকড়, শোশক জাতীয় পোকার আমদানি বেড়ে ফসল নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ওই সব পোকা কমে যেত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এই সময়ে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য ও গ্রীষ্মকালীন আনাজের চাষ হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় আনাজ চাষ পিছিয়ে যাবে। তবে বৃষ্টি হয়নি বলে আলুর ফলন ভাল হবে। ইতিমধ্যে যাঁরা কিছু আনাজ চাষ করে ফেলেছেন, তাঁরা সমস্যায় পড়বেন না। মার্চের এই সময়ে আমগাছে মুকুল ধরে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় আমের মুকুল ঝরে পড়তে শুরু করেছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো চাষে ক্ষতি হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এক ধরনের পোকার আক্রমণ ও তাদের প্রজনন বাড়ে। এই পোকার উপদ্রব আটকাতে ৫-৬ মিলিলিটার জলে নিম জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পোকার আক্রমণ বেশি হলে ইমিডা ক্লোরাফিড ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। গাছের পাতায় পচন শুরু হলে কারবেন্ডাজিম ও ম্যানকোজ়েব নামে দু’টি রাসায়নিক সারের মিশ্রণ জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সময় মতো বৃষ্টি হলে এত কিছুর দরকারই হত না বলে জানাচ্ছেন দফতরের কর্তারা। ভাঙড়ের পানাপুকুর গ্রামের চাষি আবেদ আলি মোল্লা বলেন, “প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে পোকা ধরেছে, পচন শুরু হয়েছে। এ রকম চললে, আমার খরচের টাকাও উঠবে না।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, “এই সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় আনাজের কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। আমরা নজর রাখছি।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, শীতের মরসুমে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি দুই-ই চাযের জন্য ক্ষতিকর। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ফসলের অনেকটাই ক্ষতি হতে পারে।
জেলা কৃষি দফতরের গবেষক অনুজ পাল বলেন, “কৃষকেরা জল কিনে চাষের জমিতে দিচ্ছেন। বৃষ্টির জলের অভাব সেচের জলে মেটে না। গরমে আনাজের ফুল ঝরে পড়ে। আলু-পেয়াঁজের মতো কিছু ফসলের ফলন ভাল হলেও বাকি ফসলে প্রভাব পড়েছে।” নীলগঞ্জের কৃষক শেখ মোস্তফা আলি বলেন, “বেগুন, টোম্যাটো গাছ নষ্ট হচ্ছে। গত বছর ঘণ্টা প্রতি ৯০ টাকায় জল কিনেছি। এ বার ১৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৬-১৭ মার্চ দু’দিন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে দু’এক জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।”