COVID-19

ফের করোনা তালিকার প্রথমে আসছে উত্তর ২৪ পরগনা

শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভাগ্যনির্ণয় হবে। বুথের ভিড় থেকে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১০
Share:

করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে উত্তর শহরতলি। সব থেকে খারাপ অবস্থা দমদম, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, বিধাননগর ও ব্যারাকপুরে। ফাইল চিত্র।

করোনার সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে পড়ছে দেখেও বেহুঁশ জনগণের বড় অংশ। যার ফলে লাগামহীন ভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে গত বছর অন্য সব এলাকাকে টেক্কা দিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা। এ বারও সেই পথেই হাঁটছে ওই জেলা।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, কেবল বৃহস্পতিবারেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৫৪ জন। গত ছ’দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের! এর পরেও অবশ্য হেলদোল নেই জনগণের একটি বড় অংশের মধ্যে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, জনসভা থেকে বাজারহাট, কোভিড-বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে সর্বত্রই। করোনা পরিস্থিতি যে গত বছরের থেকেও খারাপ, তা জানিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় শুক্রবার বলেন, ‘‘এখন গত বছরের আক্রান্তের পরিসংখ্যানকে প্রতিদিনই ছাপিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে প্রতিষেধক নিতে বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কঠোর ভাবে বিধি মানতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।’’

“কিন্তু বিধি মানবেন কারা? যাঁরা এখনও সদর্পে মাস্ক ছাড়া গণপরিবহণে ঘুরে বেড়ান?” আক্ষেপ করছিলেন দমদমের বাসিন্দা গোপাল দাস। তিনি জানান, প্রতিদিন লোকাল ট্রেনে তিন জনের আসনে গুঁতোগুঁতি করে চার জন বসেন। তা-ও আবার অনেকেরই মুখে মাস্ক থাকে না। মাস্ক পরুন, বলতে গেলেই বক্রোক্তি আসে, ‘অসুবিধা হলে অন্য জায়গায় বসুন।’

Advertisement

শুধু কি ট্রেন, মেট্রো, বাস বা অটো? রাজনৈতিক দলের মিছিল-সমাবেশ, চৈত্র সেলের হিড়িক দেখলে তো বোঝাই যাবে না যে এ বিশ্বে এখনও করোনা নামের কোনও ত্রাস আছে।

করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে উত্তর শহরতলি। এমনটাই জানিয়েছে সরকারি তথ্য। সব থেকে খারাপ অবস্থা দমদম, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, বিধাননগর ও ব্যারাকপুরে। অথচ, নির্বাচনের প্রচারে সভা কিংবা কেনাকাটার ভিড়ে ভাটা পড়ছে না।

মধ্যমগ্রামের বাদু বাজারে চায়ের দোকানের আড্ডার রাজনৈতিক তর্কেও মাস্ক না পরার আধিক্য নজরে এল। মাস্ক পরেননি কেন? প্রশ্ন শুনেই প্রবীণ রফিকুল ইসলাম বললেন, ‘‘ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে আমার। আর করোনার ভয় নেই।’’ বারাসতের হরিতলা বাজারে দেখা গেল, মাস্ক ছাড়াই ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটার ভিড়। একই অবস্থা বারাসত স্টেশনেও। ওই শাখার নিত্যযাত্রী, স্কুলশিক্ষক প্রেমানন্দ বিশ্বাসের ক্ষোভ, ‘‘অধিকাংশ যাত্রী মাস্ক পরেন না। বললে হাসি-ঠাট্টা করেন। চেনাজানা অনেক শিক্ষকেরাই করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে অনুঘটকের কাজ করছে ভোটপর্ব।”

আজ, শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভাগ্যনির্ণয় হবে। এর পরে ওই জেলার আরও ১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে বাকি থাকবে নির্বাচন। বুথের ভিড় থেকে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তাই প্রতিটি বুথে করোনা সতকর্তায় ফ্লেক্স লাগিয়ে লিফলেট বিলি করছে সংশ্লিষ্ট দফতর।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতিটি বুথে স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটারদের মুখে অবশ্যই মাস্ক থাকতে হবে। ভোটের লাইনে সামাজিক দূরত্ব মানার দিকেও নজর দেওয়া হবে।’’ জেলাশাসক জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই সর্বদল বৈঠক ডেকে যতটা সম্ভব কম জনসভা করা, দূরত্ব-বিধি মানা এবং মাস্ক পরায় জোর দিতে বলা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement