দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় চলছে লালারস সংগ্রহ। ডায়মন্ড হারবারে ছবিিট তুলেছেন দিলীপ নস্কর
প্রশাসনের উদ্যোগে ব্লক হাসপাতালগুলিতে শুরু হয়েছে করোনা আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগীর লালারসের নমুনা সংগ্রহ। এ জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৯টি ব্লক হাসপাতালে কিয়স্ক তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচটি মোবাইল করোনাভাইরাস টেস্টিং ভ্যান কাজ করছে। কিন্তু নমুনা সংগ্রহের পরে রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে বহু ক্ষেত্রে। চিকিৎসার সমস্যাও হচ্ছে তাতে।
সংগৃহীত লালারস এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে এই জেলা থেকে। গত কয়েক দিন ধরেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নমুনা পাঠানো হয়েছে এসএসকেএমে। অভিযোগ, এক সঙ্গে এত নমুনা আসতে থাকায় সময় মতো তা পরীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরিতে দেরি হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশে ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ফিরতে শুরু করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। যাঁদের অনেকেরই জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ আছে। এ ছাড়া, এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের কোনও উপসর্গ নেই। অথচ কোনও না কোনও ভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরা। যাতে কোনও ভাবেই এঁদের থেকে সংক্রমণ না ছড়ায়, সে জন্য সচেষ্ট জেলা প্রশাসন। সেই মতো জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্লক হাসপাতালগুলিতে শুরু হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক-সহ সন্দেহজনকদের লালারস
সংগ্রহের কাজ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন দু’য়েক আগে পর্যন্ত জেলায় ৩৪৫৫ জন রোগীর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মোবাইল ভ্যান থেকে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৩৪৬ জনের। এঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৫০ জনেরই রিপোর্ট তৈরি হয়নি।
ভাঙড়ের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে গত ৫ মে থেকে শুরু হয়েছে লালারসের নমুনা সংগ্রহের কাজ। ১১ মে পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ১২৫ জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭৩ জনের রিপোর্ট এলেও বাকি রিপোর্ট আসেনি। ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকার মঠেরদিঘি ব্লক হাসপাতালে গত ৭ মে থেকে ৮০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩০ জনের রিপোর্ট এলেও বাকি রিপোর্ট আসেনি। ক্যানিং ১ ব্লকের ঘুটিয়ারিশরিফ ব্লক হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত কোনও রোগীর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সাধারণত লালারসের নমুনা সংগ্রহ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করা উচিত। যদি কোনও ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা না হয়, তা হলে সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হবে। না হলে নমুনা নষ্ট হয়ে যাবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ব্লক হাসপাতাল থেকে নমুনা আইস প্যাক ও কোল্ড বক্সের মধ্যে করে পাঠানো হচ্ছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।যাতে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা সঠিক ভাবে হয়।
জেলায় করোনাভাইরাসের প্রভাব রুখতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলায় দৈনিক ১ হাজার রোগীর লালারসের নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। যে কারণে ১১, ১২ মে ব্লক হাসপাতালগুলিতে কোনও নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি বলে জানা যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, সোনারপুর সহ যে সব জায়গায় সমস্যা বেশি আছে, সেই সব এলাকাগুলি থেকে নমুনা বেশি করে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। যে সব এলাকায় সমস্যা কম, সেখান থেকে কম করে নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে। যাতে রিপোর্ট পেতে দেরি না হয়।
এ বিষয়ে জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘আমরা যে পরিমাণ নমুনা পাঠাচ্ছি, সেই মতো রিপোর্ট আসছে। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। আমরা এসএসকেএম হাসপাতাল ছাড়াও অন্য একটি বেসরকারি ল্যাবের সঙ্গেও চুক্তি করেছি। আরও বেশ কিছু ল্যাবের সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করছি।’’