এখনও এমনই ভিড় হাবড়ায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
করোনাভাইরাসে মৃত্যুর তালিকাতে এ বার ঢুকে পড়ল হাবড়ার নাম। রবিবার রাতে বারাসতের করোনা হাসপাতালে হাবড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হাবড়ার ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।’’
সোমবার সকাল থেকে লকডাউন যাঁরা ভাঙছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। শুরু হয়েছে ধরপাকড়ও।
বৃহস্পতিবার ওই বৃদ্ধের লালারস পরীক্ষা করে জানা গিয়েছিল, তিনি করোনা পজিটিভ। তারপর তাঁকে বারাসতের করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডায়াবেটিস ও কিডনির সংক্রমণ নিয়ে তিনি ২৭ এপ্রিল দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে ভর্তি হন। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত জানতে পেরেই হাবড়ার বাণীপুর এবং সংলগ্ন এলাকার পাঁচটি বাজার-হাট বন্ধ করা হয়েছিল। ওই ব্যক্তির বাড়ি সংলগ্ন এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ওই এলাকার পরিবারের জন্য একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারের কাছে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার ফোন নম্বর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনমতো ওষুধ, দুধ-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এ দিন ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর জানার পর এলাকার মানুষ ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকেদের দ্রুত লালারস পরীক্ষার দাবি তোলেন। হাবড়া পুরসভার মেডিক্যাল অফিসার মানস দাস বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা দু’জনের মধ্যে একজনের লালারস ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি একজনেরও লালারস পরীক্ষার জন্য নেওয়া হবে। ওই দু’জন তাঁকে দমদম থেকে বারাসত করোনা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও তাঁদের সুরক্ষা পোশাক পরানো হয়েছিল।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির বাড়ির তিনজনকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। পুরসভা থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা রোজ ওই এলাকার মানুষের শারীরিক পরীক্ষা করছেন। এলাকার এক মহিলা-সহ দু’জনের লালারস পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ দিকে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কথা ছড়িয়ে পড়ার পরেও শহরবাসীর একাংশের বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। সোমবার সকালেও হাবড়া শহর বাজার এবং সড়কে অকারণে অনেকে ঘোরাঘুরি করেছেন। যশোর রোডের পাশে লোকজন দাঁড়িয়ে গল্পও করছেন। মুখে মাস্ক না পরেই রাস্তায় বেরোচ্ছেন অনেকে। বাইক, টোটো, ভ্যান রিকশা, ব্যক্তিগত ছোটগাড়িও চলছে। তাতে যাত্রীও দেখা যাচ্ছে। ভ্যান রিকশায় শারীরিক দূরত্ব না মেনে পাশাপাশি চারজন বসানো হচ্ছে। সচেতন শহরবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যার পর অনেক পাড়ায় বসছে মদ ও তাসের আসর। পাড়ার মধ্যে বাইক নিয়ে যুবকেরা আনাগোনা করছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মদের দোকান খোলার পর থেকে মানুষের লকডাউন ভাঙার প্রবণতা আরও বেড়েছে।
লকডাউন উপেক্ষা করে সড়কে বা বাজারে অকারণে ঘোরাঘুরি করার অভিযোগে সোমবার পুলিশ অবশ্য ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে বাইক চালক, দোকানি এবং সাধারণ মানুষ রয়েছেন। হতাশ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে প্রতিটি পরিবারে হাতে কার্ড দেওয়া হয়েছে। একটি পরিবারের একজন ওই কার্ড নিয়ে সপ্তাহে দু’দিন বাজার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বেরতে পারছেন। তারপরও কিছু মানুষ বিনা কারণে পথে ঘোরাঘুরি করছেন। রোজ ৫টি পুলিশের গাড়ি ও ১৪টি বাইক এলাকায় টহল দিচ্ছে।’’