ভিড় নেই হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র
ভিড়ে ঠাসা হাসপাতাল, গত কয়েক মাসে রীতিমতো সুনসান।
আগে প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৮০০-১০০০ রোগী বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে দেখাতে আসতেন। এখন লকডাউন ও করোনার আবহে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। খুব প্রয়োজন না থাকলে সহজে কেউ হাসপাতালমুখো হতে চাইছেন না। তার মধ্যে সম্প্রতি ওই হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা ধরা পড়ে। তারপর থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ হাসপাতালের ধারে-কাছে যেতে চাইছেন না।
তবে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা দায়সারা ভাবে চিকিৎসা করেন। কথায় কথায় রেফার করা হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এখন কদর বেড়েছে গ্রামীণ চিকিৎসকদের। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা ওষুধের দোকানে গিয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে সরাসরি ওষুধ কিনছেন। কিন্তু এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
বঙ্গীয় গ্রামীণ চিকিৎসক সমিতির সম্পাদক আমির আলি মোল্লা বলেন, ‘‘এখন প্রতিদিন গড়ে গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে ৫০-৬০ জন রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে আসছেন। পরিস্থিতি বুঝে আমরা তাঁদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে অনেকেই এখন হাসপাতালে যেতে চাইছেন না।’’
১৯ জুন ভাঙড়ের পূর্ব কাঁঠালিয়া গ্রামের নুর মোহম্মদ মোল্লা নামে এক ব্যক্তি জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কষ্ট পাচ্ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের লোকজন কোনও গাড়ি পাচ্ছিলেন না। নিরুপায় হয়ে তাঁরা ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বারবার ফোন করেন অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। অনেক পরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এলেও চালক ওই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাননি বলে অভিযোগ। চালকের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, পরনে পিপিই কিটও ছিল না বলে অভিযোগ। পরে স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে ওই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁকেও রেফার করা হয়।
তারও আগে ভাঙড়ের জয়পুর গ্রামের আনসার মোল্লা পারিবারিক বিবাদের জেরে মারামারিতে জখম হয়েছিলেন। তাঁকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও না করে রেফার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। কলকাতার চারটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি করতে না পেরে বাইপাসের ধারে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে জখম রোগী মারা যান। ভাঙড় ২ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ ওই হাসপাতালে উপরে নির্ভরশীল। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, করোনা মোকাবিলায় কলকাতার বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছে। ফলে সাধারণ রোগীকে ভর্তি করতে সমস্যা হচ্ছে। ভাঙড়ের প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষ ব্লক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে অন্যত্র রেফার করে দেওয়ায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে,৩০ বেডের হাসপাতাল হলেও রোগীর চাপে বাড়তি শয্যা দিয়ে ৪৬ বেড করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স অপ্রতুল। ভাঙড় ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আমিনা মরিয়ম বলেন, ‘‘একজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে রোগী ও তাঁর পরিবার এখানে আসতে চাইছেন না। যাতে রোগীরা এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন, সে জন্য আশাকর্মীদের প্রচার করতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া, প্রয়োজন ছাড়া কোনও রোগীকে সাধারণত রেফার করা হয় না।’’ অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।