শূন্য: ঝড়খালি পর্যটন কেন্দ্রে দেখা নেই পর্যটকদের। নিজস্ব চিত্র।
এপ্রিলের শুরু থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি ক্যানিং মহকুমায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা সমস্ত ব্লকেই প্রতিদিন দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবন ভ্রমণে আসতে ভয় পাচ্ছেন পর্যটকেরা। প্রতিদিনই বুকিং বাতিল হচ্ছে। ফলে আবারও প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছেন সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ট্যুর অপারেটর থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। লঞ্চ মালিক, লঞ্চের চালক ও কর্মচারী, রাঁধুনি, হোটেল মালিক ও কর্মচারী সহ বহু মানুষ পর্যটন শিল্পের ভরসায় সংসার চালান। গত বছর লকডাউনের ফলে দেশের অন্যান্য জায়গার পর্যটন শিল্পের মতোই বন্ধ ছিল সুন্দরবনের পর্যটন। সে বার গরমের ছুটির সমস্ত বুকিং বাতিল হয়েছিল। এমনকী, পুজোর ছুটিতেও মানুষজন সে ভাবে বেড়াতে আসেননি। তার উপরে আমপানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের উপরে আছড়ে পড়ায় লঞ্চ, ভুটভুটি থেকে শুরু করে পর্যটন কেন্দ্রের ক্ষতি হয়েছিল। বেশ কিছু দিন সুন্দরবনে পর্যটন সম্ভব হয়নি। এক কথায়, গত বছর নানা টালবাহানার মধ্যে কাটিয়েছেন সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।
শীতের মরসুম থেকে পর্যটকেরা সুন্দরবনে আসতে শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে ব্যবসা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। নতুন করে করোনা সংক্রমণের ফলে ফের সমস্যার মুখে পড়ল এই শিল্প। গত কয়েক দিনে একের পর এক ট্যুর বাতিল করেছেন পর্যটকেরা। গরমের মরসুমে সে ভাবে পর্যটকেরা সুন্দরবনে না এলেও শনি, রবি ও ছুটির দিনগুলিতে যথেষ্ট ভিড় হয় সুন্দরবনে। কিন্তু এ বার সেই ছবি উধাও। বর্ষার মরসুমে ইলিশ উৎসবকে সামনে রেখেও প্রচুর পর্যটক গত কয়েক বছর সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত ইলিশ উৎসবের কোনও বুকিং হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ট্যুর অপারেটররা।
পর্যটন ব্যবসায়ী নিউটন সরকার বলেন, “গত কয়েক দিনে আমারই তিনটি ট্যুর বাতিল হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে পর্যটকেরা আসতে চাইছেন না। অন্যান্য ট্যুর অপারেটরদেরও একই অবস্থা। যা পরিস্থিতি, তাতে যেন গতবারের ভয়াবহ স্মৃতিই ফিরে আসছে।”
সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায় লঞ্চ ও ভুটভুটি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জলযান চলে। ক্যানিং, বাসন্তী, ঝড়খালি, গোসাবা মিলিয়ে প্রায় ১০০ হোটেল ও লজ রয়েছে। এ ছাড়া, বহু ছোট-বড় ব্যবসায়ী এই পর্যটন কেন্দ্রগুলির আশেপাশে নানা ধরনের ব্যবসা করে জীবনযাপন করেন। পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধের ফলে সকলেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সুন্দরবন পিউপিল ওয়াটার সোসাইটির সম্পাদক উপানন্দ বৈদ্য বলেন, ‘‘পর্যটনের সঙ্গে বহু মানুষের রুটিরুজি যুক্ত। গত কয়েক দিনে যে ভাবে ট্যুর বাতিল হতে শুরু করেছে, তাতে আমরা যথেষ্ট চিন্তায় আছি। আমরা সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্যুর করতে চাইলেও চারিদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণেই পর্যটকেরা এই মুহূর্তে আসতে চাইছেন না।”