ফাইল চিত্র।
আক্ষরিক অর্থেই এ বার নমো নমো করে কালীপুজো হতে চলেছে বারাসত এবং মধ্যমগ্রামে। পুজোর অর্থ খরচ হবে জনসেবায়। যে পুজোর সুবাদে বারাসতের খ্যাতি, সেই পুজোয় থাকছে না কোনও জৌলুস। কেবলমাত্র আচার এবং আনুষ্ঠানিকতাই এ বারের কালীপুজোর মূল মন্ত্র এই দুই শহরে। দুর্গাপুজোয় দর্শনার্থীদের ঢল ঠেকাতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বারাসতের বড় পুজোর উদ্যোক্তারা।
আর পাঁচটা শহরের মতো দুর্গাপুজোয় তেমন জাঁক নেই বারাসত শহরের। কালীপুজোই এই শহরের সেরা উৎসব। সব মিলিয়ে শতাধিক পুজো হয়। তবে প্রায় কুড়িটি বড় পুজো ঘিরেই আবর্তিত হয় যাবতীয়
মাতামাতি। মূল থিম তো বটেই, প্রতিমা থেকে মণ্ডপ, আলোকসজ্জা ঘিরে প্রতিযোগিতা হয় বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে। শহরের মুখ ঢাকে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং-তোরণে। কেএনসি রেজিমেন্ট, পায়োনিয়ার, রেজিমেন্ট-সহ বেশ কিছু পুজোর মণ্ডপ তৈরি শুরু হয় বিশ্বকর্মা পুজোর সময় থেকেই। নজর কাড়ে শতদল, নবপল্লি সর্বজনীন, নবপল্লি ব্যায়াম সমিতি-সহ আরও কয়েকটি বড় পুজোও।
এ বছর দুর্গাপুজোর মাসখানেক আগেই শহরের বড় পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বারাসত পুরসভায় বৈঠক হয়েছিল। বারাসত পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য অশনি মুখোপাধ্যায় নিজেও একটি বড় পুজো কমিটির কর্ণধার। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে বড় পুজোগুলি জৌলুস বাদ দিয়ে শুধু পুজোটুকু করতে সম্মত হয়েছে। নামমাত্র মণ্ডপ হচ্ছে। রাস্তায় কোনও আলোকসজ্জা থাকছে না।’’
বারাসত পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনার কথা মাথায় রেখে আমরা বড় পুজো কমিটিগুলির কাছে জৌলুসহীন পুজোর আবেদন জানিয়েছিলাম। তাতে সকলে সাড়া দিয়েছেন। ঠিক হয়েছে, এ বারের প্রতিযোগিতা হবে জনসেবায়। সব পুজো কমিটিই পুজোর জন্য ন্যূনতম বরাদ্দ রেখে সেই টাকায় দু:স্থদের পোশাক দেবে। সাহায্য করা হবে গরিবদেরও।’’
আর একটি পুজো কমিটির কর্ণধার গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বারের পুজোয় চাঁদা নেওয়া হচ্ছে না। থাকছে না ব্যানার-হোর্ডিংও। মণ্ডপের বাইরে স্টল হচ্ছে না। ফলে ভিড়ের প্রশ্নও থাকছে না। আমরা ঠিক করেছি, শহরের সব ওয়ার্ডেই ৮-১৬ বছর বয়সিদের পোশাক বিতরণ করব।’’
একই পথে হাঁটছে মধ্যমগ্রাম পুরসভাও। বারাসতের পাশাপাশি গত কয়েক বছরে এই শহরের কালীপুজোও নজর কাড়ছে। কয়েক কোটি টাকা খরচ হয় এখানেও। মধ্যমগ্রাম পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক রথীন ঘোষ জানান, শহরে প্রায় ১৬০টির মতো পুজো হয়। তার মধ্যে বড় পুজো ২৫টি।
এই পুজোগুলি ঘিরে দর্শনার্থীদের ঢল নামে মণ্ডপে মণ্ডপে। এ বার বড় পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে মধ্যমগ্রামেও। রথীনবাবু বলেন, ‘‘ছোট করে পুজো করতে সব পুজো কমিটিই রাজি হয়েছে। কোনও জৌলুস থাকছে না। নিয়মরক্ষার পুজো হবে এ বার।’’ তিনি জানান, কয়েক দিনের মধ্যে ফের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানে আরও কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে।