হাসপাতালে পরিযায়ী শ্রমিকদের লালারস সংগ্রহ হচ্ছে। তথ্য: হাসপাতাল
মেডিসিন বিভাগে শয্যার সংখ্যা ৮০। গত বছর এই সময়ে প্রায় আড়াইশো রোগী ভর্তি ছিলেন সেখানে। প্রতি শয্যায় তিনজন রোগী রেখেও মেঝেতেও শুইয়ে রেখে চিকিৎসা করতে হয়েছিল। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এ বছর ঠিক তার উল্টো ছবি। ৮০ শয্যার মেডিসিন বিভাগে রোগী ভর্তি মাত্র ৩০ জন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, তফাৎ শুধু রোগীর সংখ্যাতেই নয়, আরএ কিছু বদল চোখে পড়ার মতো। আগে রোগী পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে বাড়ি ফিরতে চাইতেন না। অনেককে প্রায় জোর করে ছুটি দিতে হত। পুরো সুস্থ হওয়ার জন্য এখন আর অপেক্ষা করছেন না কেউ। সামান্য উপশম হলেই জোর করে ছুটি নিয়ে বাড়ি হাঁটা দিচ্ছেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনা-আতঙ্ক এতটাই জাঁকিয়ে বসেছে যে রেফার করতে চাইলেও তাঁরা কলকাতার হাসপাতালে যেতে চাইছেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ পেটে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় এক যুবক। চিকিৎসক তাঁকে আলট্রাসনোগ্রাফি এবং রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। বিকেল ৪টে নাগাদ যুবক কিছুটা সুস্থ বোধ করতেই ছুটির জন্য অনুরোধ করতে শুরু করেন। চিকিৎসক ছুটি দিতে রাজি ছিলেন না। শেষে বন্ডে সই করে যুবকটি ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, “রোগীরা যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরতে চাইছেন। সকালে ভর্তি হলে বিকেলেই ছুটি দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে শুরু করছেন। আগে রোগীরা সম্পূর্ণ সুস্থ না হলে বাড়ি ফিরতে চাইতেন না। করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতিই বদলে গিয়েছে।”
হাসপাতালে করোনাতঙ্ক
• বছরের এই সময়ে বহির্বিভাগে রোগী আসেন দিনে প্রায় হাজারজন)
• এখন আসছেন দিনে গড়ে মাত্র ২০০ জন
• বহু রোগী সামান্য সুস্থ হলেই ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন
পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৮০টি। তার বেশিরভাগ ফাঁকাই থাকছে। তবে ভিড় থাকছে প্রসূতি বিভাগে। এই বিভাগে শয্যা ৪০টি। কিন্তু ভর্তি থাকছেন প্রায় ৭০ জন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এলাকায় প্রসবের বিকল্প ব্যবস্থা খুব বেশি নেই। ছোটখাটো নার্সিংহোম বন্ধ। লকডাউনের জেরে অনেকেই এখন বেরোজগার। বড় নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত বছর এই সময়ে হাবড়া এবং আশপাশের এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছিল। সেই জন্য হাসপাতালে জায়গা ছিল না। এ বার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান মেলেনি। হাসপাতালে বর্তমানে মোট শয্যা সংখ্যা ১৩১টি। গত বছর রোগীর চাপ দেখে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তা এখনও কার্যকর হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের এই সময়ে বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে এক হাজার রোগী আসেন। এখন সেখানে আসছেন দিনে গড়ে মাত্র ২০০ জন। শঙ্কর বলেন, “বহির্বিভাগে রোগী কম আসছেন বলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে।” হাসপাতালে পরিযায়ী শ্রমিকদের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে আতঙ্কে হাসপাতালে আসতে চাইছেন না অনেকেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোনও রোগীকে বারাসত বা আরজিকর হাসপাতালে রেফার করার প্রয়োজন হলেও রোগী যেতে চাইছেন না। হাসপাতালে একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।