ফলতায় স্কুলের সামনে রয়েছে ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র
তিনি স্কুলের কেউ নন। তবু কেউ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না-পারলে তিনি আছেন!
ফলতার ফতেপুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউটশনের গেটে ফ্লেক্স লাগিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি মানবেন্দ্র মণ্ডল। তাতে জানানো হয়েছে, ওই স্কুলের কোনও ছাত্র একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না-পারলে যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রয়েছে তাঁর ফোন নম্বর। স্কুলের সামনে একই রকম লিফলেটও বিলি করছেন তাঁর অনুগামীরা।
৯০ বছরের ওই স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এ বার যে ভাবে ওই তৃণমূল নেতা ‘সাহায্যের’ কথা ঘোষণা করেছেন, তাতে অভিভাবকেরা অবাক। অনেকে ক্ষুব্ধও। কেউ কেউ মনে করছেন, এ ভাবে শাসকদলের নেতা দাদাগিরি করছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করলেই সমস্যা মেটে। বিব্রত স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলকান্তি ঘোষও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিয়ম মেনে ভর্তি চলছে। তা সত্ত্বেও ওই নেতার সুপারিশ করা ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি নেওয়ার জন্য ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’
অভিযোগ মানেননি মানবেন্দ্রবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘আমি চাই স্কুলের দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ সকলেই এবং এলাকার গরির ছেলেমেয়েরাও যেন ওখানে পড়ার সুযোগ পায়। ওখানে ভর্তি হতে না-পেরে অনেকের অভিভাবক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সমস্যার কথা শিক্ষামন্ত্রীও জানেন।’’
এলাকার অন্যতম নামী স্কুল ফতেপুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন। একাদশ শ্রেণিতে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য—তিনটি বিভাগে মোট আসন ২৭৫। মেধার ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ২৩০ জনকে ভর্তিও নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে স্থানীয় এবং বরিহাগত— দু’ধরনের ছাত্রছাত্রীই রয়েছে। ওই স্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে ২১১ জন। নম্বর কম থাকায় তাদের অনেকেরই ওই স্কুলে একাদশে জায়গা হয়নি। ফিরতে হয়েছে এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রীকেও। এখানেই আপত্তি মানবেন্দ্রবাবুর।
প্রধান শিক্ষক জানান, ভাল ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির রেওয়াজ এই স্কুলের দীর্ঘদিনের। সেই রেওয়াজ মতো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নিয়ম মেনে ভর্তি চলছে। কিন্তু যে ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। গরমের ছুটির পরে স্কুল খুললে সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানানো হবে বলেও প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক বাদল পাত্র জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই স্কুলে এলাকার সব ছাত্রছাত্রীর ভর্তিতে সমস্যার কথা যে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে, তা জানিয়েছেন ফলতার তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষও। তবে, তাঁর দলেরই এক নেতা যে ভাবে স্কুলে ফ্লেক্স লাগিয়ে, লিফলেট বিলি করে ‘সাহায্যের’ আশ্বাস দিচ্ছেন, তা তাঁর অজানা বলে দাবি করেছেন বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘ওটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।’’
স্কুলে ফ্লেক্স লাগাতে হল কেন? কেনই বা লিফলেট বিলি?
মানবেন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘অভিভাবকদের সাহায্য করতে চাই। তাঁদের কথা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এলাকার নেতা হিসেবে এ কাজে প্রশ্ন কেন?’’