এই জমিতে ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র
ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে মাছের ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠল। পাথরপ্রতিমার লক্ষ্মীজনার্দনপুর পঞ্চায়েতের কেদারপুর এলাকার ঘটনা। অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে ওই এলাকায় মৃদঙ্গভাঙা নদী তীরবর্তী প্রায় ১০ বিঘা জমির ম্যানগ্রোভ কেটে মাছের ভেড়ি তৈরি করে লিজ়েও দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন দফতরের তরফে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। পরে সেখানে ভেড়ি তৈরি করে সেই ভেড়ি পঞ্চায়েতের তরফে লিজ় দেওয়া হয়েছে। এমনকী, ওই এলাকায় একটি বাঁধ মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ লক্ষ টাকাও ভেড়ির কাজে লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে সম্প্রতি এলাকা পরিদর্শনে আসেন বন দফতরের আধিকারিকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা তরুণকুমার বেরা বলেন, “প্রথমে পঞ্চায়েতের সংসদ সভায় আলোচনা হয়েছিল, নদীর চরে খেলার মাঠ তৈরি হবে। সেই মতো ম্যানগ্রোভ কেটে মাঠ তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, মাছের ভেড়ি তৈরি হয়েছে। বেহাল নদীবাঁধ মেরামতির কাজ না করে মাছের ভেড়ির পাড় তৈরি হয়েছে। যা পরিস্থিতি, কটালে নদীর জল এলাকায় ঢুকবে। প্লাবিত হবে গ্রাম।”
পঞ্চায়েতের তরফে যে ওই ভেড়ি লিজ় দেওয়া হয়েছে, তা মেনে নেন ভেড়ির দায়িত্বে থাকা সদয়কুমার সিট। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতের তরফে আমাকে দু’বছরের জন্য লিজ়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বন দফতরের লোকজন এসে বলে গিয়েছে, কোনও ভাবে জল আটকে রাখা যাবে না। আমি না জেনে নিয়েছি। বিষয়টি পঞ্চায়েতকে জানাব।”
পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অশ্বিনী মিদ্দা বলেন, “গ্রামসংসদে আলোচনা হয়েছিল, নদীর পাশে ভাঙা বাঁধের একটু দূরে রিং বাঁধ তৈরি হবে। ভবিষ্যতে একটি খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। সেই মতো পঞ্চায়েত থেকে রিং বাঁধ তৈরি করা হয়। বাঁধ-লাগোয়া একটি মাছের ভেড়ি পঞ্চায়েত থেকে লিজ় দেওয়া হয়েছে। মানুষের উপকারের জন্যই এই কাজ করা হয়েছে। ওখানে এমন কিছু ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়নি।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, “স্থানীয় রেঞ্জ অফিসারকে বিষয়টি তদন্ত করে আইন মোতাবেক যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিতে বলেছি। রিপোর্ট হাতে পেলে জেলাশাসকের কাছে পাঠাবো। যাতে এই রকম ঘটনা না ঘটে, তা দেখা হবে।” পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বার বার সুন্দরবনের উপকূলীয় আইন ভাঙা হচ্ছে। সুন্দরবন এলাকাকে মানুষের জন্য বিপজ্জনক করে তুলেছে ভেড়ি মাফিয়ারা। যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সুন্দরবন এলাকায় বার বার ম্যানগ্রোভ কেটে মাছের ভেড়ি তৈরির অভিযোগ আসে। কিন্তু প্রশাসনকে তেমন পদক্ষেপ করতে দেখি না।”