—ফাইল চিত্র
ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা সহ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেই ভরসাকেই হাতিয়ার করে দিনের পর দিন রোগীদের ঠকানো হচ্ছে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। চলছে দালালদের দৌরাত্ম্য। অভিযোগ, তাতে মদত আছে কয়েকজন চিকিৎসকেরও। আউটডোরে বা জরুরি বিভাগেরোগী দেখার দেখার সময়ে কয়েকজন দালালকে পাশে নিয়ে বসছেন সেই সমস্ত চিকিৎসকেরা। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধের নাম লেখা হচ্ছে। বাইরে থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের বাইরে গজিয়ে উঠেছে বহু ডায়গনস্টিক সেন্টার। তাদের লোকজনও আউটডোর বা জরুরি বিভাগেরমধ্যে থেকে রোগীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের সেন্টারে।
বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে প্রতি দিন দিন বহু দরিদ্র মানুষ হাসপাতালে আসেন। তাঁদের অনেকেই পড়ছেন হচ্ছে দালালদের খপ্পরে। এক মহিলা চিকিৎসকের নাম উঠে আসছে লোকজনের মুখে মুখে। অভিযোগ, তিনি আউটডোরে চিকিৎসা করতে বসলে তাঁকে ঘিরে থাকে জনা দশেক দালাল। হাসপাতালের বাইরে গজিয়ে ওঠা ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলিরপ্রতিনিধি এরা। খরিদ্দার ধরার জন্য সকাল থেকে বসে থাকে হাসপাতালে। রোগীর হাত থেকে কার্যত প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের সেন্টারে তারা নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এক দালালের কথায়, “এক হাজার টাকার পরীক্ষা হলে চিকিৎসককে তিনশো টাকা দিতে হয়। ওই মহিলা চিকিৎসক আউটডোরে বসলে আমাদের সে দিন ব্যবসা ভাল হয়। আমরা জনা দশেক ওঁর আউটডোরেই থাকি। এক একদিন আমাদের প্রত্যেকেরই ৩০-৩৫ জন করে করে রোগী হয়।”
ওই চিকিৎসকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে তাঁর চেম্বারে ঢুকতেই অবশ্য চটে গেলেন তিনি। দালালদের কেন নিজের আউটডোরে, নিজের টেবিলের পাশে বসিয়ে রাখেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি সরকারি চিকিৎসক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”
এই চিকিৎসকের নামে এর আগেও বিস্তর এ ধরনের অভিযোগ শুনেছেন বলে জানালেন হাসপাতাল সুপার অপূর্বলাল সরকার। হাসপাতালের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই মহিলা চিকিৎসককে ডেকে তিরস্কার করেছেন তিনি। সুপার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি, অবিলম্বে এই কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য ওই চিকিৎসককে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা দীপক নস্কর, সুধা মণ্ডলরা অবশ্য জানাচ্ছেন, শুধু এই মহিলা চিকিৎসকই নন, অনেক চিকিৎসকই এ ভাবে দালালদের পাশে নিয়ে রোগী দেখছেন। অপ্রয়োজনে রোগীদের নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেন। ক্যানিংমহকুমা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সাধারণ মানুষের জন্য যখন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক সরকারি পরিষেবার ব্যবস্থা করেছেন, ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করেছেন— তখন মানুষকে এ ভাবে শোষণ করা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। এ বিষয়ে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে বিষয়ে হাসপাতাল সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”