চালু হওয়ার অপেক্ষায়। ইনসেটে, অযত্নে পড়ে বাতানুকূল যন্ত্র। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
দৌড়টা শুরু হয়েছিল বাম আমলে। পরবর্তীতে ব্যাটন ঘাসফুলের দখলে আসে। কিন্তু দৌড় আর শেষ হয়নি। বরং মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা।
যা নিয়ে যথারীতি শুরু হয়েছ রাজনীতির কাজিয়া। মধ্যিখানে পড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত গাঁ-গঞ্জের ছা-পোষা চাষির। যাঁদের উৎপাদিত পণ্য রাখার জন্য হিমঘর তৈরি হলেও এখনও চালু করা গেল না কৃষিপ্রধান এলাকা দেগঙ্গায়। নষ্ট হচ্ছে হিমঘরের হিম-যন্ত্রও।
কী রকম সমস্যা হচ্ছে চাষিদের?
কথা হচ্ছিল রহমতুল্লা মণ্ডলের সঙ্গে। বাড়ি দেগঙ্গার চৌরাশি। সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উজিয়ে গাইঘাটার জলেশ্বরে হিমঘরে খেতের আলু রাখতে গিয়েছিলেন তিনি। একগাদা টাকা তো খরচ হলই, উপরন্তু গিয়ে দেখেন, হিমঘরে ঠাঁই নেই। আলু ফেরত নিয়ে বাড়িতেই ডাঁই করে রেখেছিলেন। বেশির ভাগটাই পচে গিয়েছে।
অথচ, এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।
রহমতুল্লার বাড়ির ৫০০ মিটারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক হিমঘর। কিন্তু স্রেফ কিছু অনুমোদনের অভাবে এখনও চালু হয়নি। বছর তিনেক আগে তৈরি হিমঘরটি দেখভালের অভাবে ইদানীং নষ্ট হচ্ছে পেল্লায় বাতানুকূল যন্ত্র, অন্য দামি সর়ঞ্জাম।
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তর ২৪ পরগনার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির তত্ত্বাবধানে দেগঙ্গায় চিত্ত বসুর নামাঙ্কিত মুখ্য বাজার চত্বরে শিলান্যাস হয়েছিল হিমঘরের। মহাকরণ থেকে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে বহুমুখী হিমঘরটির শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছিলেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক মোর্তজা হোসেনও।
হিমঘর তৈরির কাজও শুরু হয়। ৭৫০ মেট্রিক টন সব্জি-আলু ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন হিমঘর তৈরি হতে হতে অবশ্য রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে যায়।
তাতে অবশ্য কাজ থামেনি। কিন্তু ২০১৩ সালে হিমঘর তৈরির পরে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে চালু করা হয়নি সেটি। ফসল বা আলু রাখার অনুমতি (বন্ড) মেলেনি।
অনুমতির অভাবে হিমঘর চালু করা যায়নি, তা মানছেন হিমঘরের দায়িত্বে থাকা উত্তর ২৪ পরগনা সুসংহত বাজার সমিতির সম্পাদক সৌম্যজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘হিমঘরটি ব্যবহারের অনুমতির ব্যাপারে তোড়জোড় চলছে।’’ কিন্তু সামান্য একটি অনুমতির জন্য এত দিন অপেক্ষা কেন? তা হলে লাল ফিতের ফাঁসে থমকে আছে কাজ? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে সৌম্যজিৎবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘একমাসের মধ্যেই অনুমতি নিয়ে হিমঘর চালুর চেষ্টা চলছে।’’
তবে ঘ়টনার পিছনে ‘রাজনীতির গন্ধ’ খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের ইমতিয়াজ হোসেন বলেন “দেগঙ্গার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। হিমঘর চালু হলে তাঁরা উপকৃত হতেন। কিন্তু এই প্রকল্প বাম জমানায় হয়েছে বলেই বর্তমান সরকার এসে সেটি চালু না করে ফেলে রেখেছে।”
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা সভাধিপতি রহিমা বিবি বলেন, ‘‘দফতরের কিছু কারণে অনুমতি পেতে দেরি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু দ্রুত সমস্যা মেটানো হচ্ছে।’’
এমন প্রতিশ্রুতি অবশ্য প্রথম শুনছেন না বাসিন্দারা। তাঁরা নিজেদের সমস্যা নিয়েই ভাবিত।
দেগঙ্গার চ্যাংদানা গ্রামের চাষি গোপাল সর্দার বলেন, ‘‘আমাদের কাছাকাছি হিমধর বলতে বসিরহাটের খোলাপোতা বা গাইঘাটার জলেশ্বর। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের সেই হিমঘরে ফসল নিয়ে যেতে প্রচুর টাকা গাড়ি ভাড়া পড়ে যায়।’’ ইসরাইল আলি নামে এক আলু চাষি বলেন, ‘‘এ বার ফলন কম হয়েছে। কিন্তু পরের বার দাম পাওয়ার আশায় হিমঘরে যে আলু মজুত রাখব, তার উপায় নেই।’’
এই পরিস্থিতিতে দেগঙ্গার চাষিদের ভরসা বলতে পড়ে থাকছে সেই ফড়েরাই।