(বাঁ দিকে) অশোকনগরে শপথ নিচ্ছেন প্রবোধ সরকার। (ডান দিকে) গোবরডাঙায় চেয়ারম্যান হওয়ার পর সুভাষ দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েক বছর ধরেই দুই নেতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছিল। শনিবার শপথ অনুষ্ঠানেও তা বজায় রইল পুরোমাত্রায়। মঞ্চে বসেও কথা বললেন না অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার নতুন পুরপ্রধান তৃণমূলের প্রবোধ সরকার এবং বিদায়ী বোর্ডের পুরপ্রধান তথা বর্তমান কাউন্সিলর সমীর দত্ত।
দিনের শেষে দু’জনেই একসঙ্গে আগামী পাঁচ বছর উন্নয়নমূলক কাজের আশ্বাস দিলেও ‘হৃদ্যতা’ কতটা বজায় থাকবে, তা নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল।
২৩টি আসনের এই পুরসভায় তৃণমূল পেয়েছে ১৮টি, সিপিএম ৫টি। ফল ঘোষণার পর থেকেই চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা কম হয়নি। দু’পক্ষই রাজ্য নেতৃত্বের কাছে চেয়ারম্যান পদের দাবি তোলে। প্রবোধবাবু আগের পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান ছিলেন। সেই বোর্ড গঠনের সময়েও যে ভাবে দুই নেতার বিবাদ সামনে এসেছিল, এ বারও তা বজায় থাকবে কিনা, তা নিয়ে কৌতূহল দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কম ছিল না। শনিবার দুপুরে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রবোধবাবুকে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন করার জন্য দলীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে হুইপ জারি করেন। এ সংক্রান্ত চিঠিও বিলি করা হয়। কিন্তু তার পরেও শপথ অনুষ্ঠানের গোড়ায় সমীরবাবু এবং তাঁর অনুগামী ৮ কাউন্সিলরকে দেখা যায়নি।
এ দিন পুরভবনের পাশে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। দুপুরে বারাসতের মহকুমাশাসক পীযূষকান্তি দাসের কাছে শপথ-বাক্য পাঠ করার জন্য প্রবোধবাবু যখন তাঁর অনুগামী কাউন্সিলরদের নিয়ে মঞ্চে ওঠেন, তখন সমীরবাবু এবং তাঁর অনুগামীরা ছিলেন পুরভবনেই। চেয়ারম্যান পদ না পাওয়ায় সমীরবাবু প্রথমে শপথ নিতে রাজি হননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে অবশ্য দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমীরবাবুরা শপথ নেন। মঞ্চে সমীরবাবু এবং প্রবোধবাবুকে কথা বলতে দেখা যায়নি।
পুরভবনে সমীরবাবু-সহ সব কাউন্সিলরের সম্মতিতেই প্রবোধবাবু পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। পুরপ্রধান হিসেবে প্রবোধবাবুর নাম প্রস্তাব করেন সমীরবাবুই। পুরভবন থেকে বেরিয়ে মঞ্চে ওঠার সময় দুই নেতাই পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়েই ছিলেন। দলীয় নেতাদের কেউ কেউ দাবি করেন, জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মধ্যস্থতায় দুই নেতার দ্বন্দ্ব আপাতত মিটেছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘সমীরবাবু গত পাঁচ বছর ধরে উন্নয়ন না করলে এখানে এ বার পুরবোর্ড জিততে পারতাম না। সমীরবাবু ও প্রবোধবাবু দু’জনেই একসঙ্গে পুরবোর্ড চালাবেন।’’ সমীরবাবুর কাজের প্রশংসা করে প্রবোধবাবু বলেন, ‘‘আগামী পাঁচ বছর দু’জনে মিলে নতুন করে শহরকে সাজাব।’’ একই সুরে সমীরবাবুও বলেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। দলের হুইপ মেনে নিয়েছি। সকলেই একযোগে কাজ করব।’’
কিন্তু তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার দল চেয়ারম্যান পদে অন্য কারও নাম বিবেচনা করে হুইপ জারি করলেও সমীরবাবুকে ওই পদে বসানোর জন্য তাঁর অনুগামীরা তদ্বির করবেন বলে প্রথমে ঠিক হয়েছিল। এ নিয়ে গত শুক্রবার সমীরবাবুর সঙ্গে তাঁর অনুগামী কাউন্সিলরদের বৈঠকও হয়। কিন্তু সেই অনুগামীদেরই কয়েক জন পরে ওই সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলেন। তার পরেই সমীরবাবুরা ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
সমীরবাবু ও প্রবোধবাবু এক সঙ্গে কাজের আশ্বাস দিলেও দলের নেতাকর্মীদের অনেকেরই মনে করছেন, যে ভাবে গত কয়েক বছর ধরে দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে তা এত সহজে মিটবে না। এ বার পুরভোটের আগে দলীয় প্রার্থী বাছাই করা নিয়েও দুই গোষ্ঠীর অনুগামীদের মধ্যে প্রকাশ্যে মারামারি হয়। পুলিশকে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। যে সব ওয়ার্ডে তাঁদের পছন্দের প্রার্থী ছিল না, সেই সব ওয়ার্ডে প্রচারে প্রবোধবাবু এবং সমীরবাবুকে বিশেষ গা ঘামাতেও দেখা যায়নি। পুরভোটে জয়ের পরেও পুরসভায় দলনেতা নির্বাচন নিয়েও দুই নেতার দ্বন্দ্ব সামনে আসে। তবে, পুর এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, দুই নেতা এক সঙ্গে কাজ করলে উন্নয়নে গতি আসবে।
এ দিনই গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেন তৃণমূলের সুভাষ দত্ত। তিনি বিদায়ী পুরবোর্ডেরও পুরপ্রধান ছিলেন। শপথ নিয়ে সুভাষবাবু বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহ করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজও দ্রুত সারা হবে।’’ দুই পুরসভাতেই অবশ্য এ দিন শপথ অনুষ্ঠানে বাম কাউন্সিলরদের দেখা যায়নি।