এই স্টেশনেরই ভোল বদলে যেতে চলেছে। — নিজস্ব চিত্র।
বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার চাঁদপাড়া স্টেশনকে মডেল স্টেশন হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। রবিবার ভার্চুয়ালি সেই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই উপলক্ষে স্টেশন চত্বরে রেলের তরফে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে দীর্ঘ দিন পরে এক মঞ্চে দেখা গেল বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে। এ দিকে রেলের অনুষ্ঠানে তৃণমূলের কোনও জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তৈরি হয় বিতর্ক।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পে চাঁদপাড়া-সহ ৫০৮টি স্টেশনকে মডেল স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ দিন সেই কাজেরই শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
চাঁদপাড়ার অনুষ্ঠানে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখানো হয়। শান্তনু, স্বপন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া এবং বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সদ্য সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। ছিলেন রেলের আধিকারিকেরাও।
শান্তনু বলেন, “চাঁদপাড়া স্টেশনটিকে মডেল স্টেশন হিসেবে গড়ে তুলতে ২৩.২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিছু দিন আগে রেলমন্ত্রীর কাছে বনগাঁ, চাঁদপাড়া, ঠাকুরনগর, গোবরডাঙা, মছলন্দপুর স্টেশনের পরিকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। রেলমন্ত্রী তখনই একটি স্টেশনের নাম দিতে বলেছিলেন, যেটি অমৃত ভারত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবে। আমি চাঁদপাড়ার নাম দিয়েছিলাম।’’ বনগাঁ, ঠাকুরনগর, গোবরডাঙা এবং মছলন্দপুর স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে বলেও এ দিন জানিয়েছেন শান্তনু। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, মডেল স্টেশন তৈরির কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে।
তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে মূল আকর্ষণ ছিল শান্তনু এবং স্বপনকে নিয়ে। গত বছর অক্টোবর মাসে এই চাঁদপাড়া স্টেশনের উন্নয়নের কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে তরজা বাধে সাংসদ ও বিধায়কের। দলীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, শান্তনু ও স্বপনের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। দলীয় কর্মসূচিতে একে অন্যকে এড়িয়ে চলতেন। ঠাকুরনগরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এনে সভা করেছিলেন শান্তনু। সেই সভায় আমন্ত্রণ পাননি স্বপন। পরে একই মাঠে অরাজনৈতিক মোড়কে সভা করেছিলেন স্বপন। দলীয় কর্মসূচিতেও দু’জনকে এক সঙ্গে কার্যত দেখা যায়নি। লোকসভা ভোটের আগে এক মঞ্চে দু’জনের আসা দূরত্ব কমার ইঙ্গিত কি না, সেই চর্চা চলছে। এ দিন এক মঞ্চে থাকলেও দু’জনকে অবশ্য বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায়নি।
স্বপন বলেন, “আমাদের মধ্যে তৃণমূলের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কোনও বিবাদ নেই। সাংসদের সঙ্গে আমার কোনও ভুল বোঝাবুঝিও নেই। উন্নয়নের স্বার্থে আমরা সকলে এক।” শান্তনু বলেন, “আমার দিক থেকে কখনও কোনও ভুল বোঝাবুঝি ছিল না। আমি কখনও কোনও বিধায়ক সম্পর্কে কোনও কথাও বলিনি। ওঁর দিক থেকে কোনও সমস্যা ছিল কি না আমার জানা নেই।”
এ দিনের রেলের অনুষ্ঠানে তৃণমূলের কোনও জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। এ বিষয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বিজেপির রাজনৈতিক সৌজন্য নেই। রাজ্যে কেন্দ্রের কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যন্ত আমন্ত্রণ করা হয় না।” এ বিষয়ে শান্তনু বলেন, “তৃণমূল কী করে? সরকারি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ করা হয় না। এ দিনের অনুষ্ঠান ছিল রেলের। কাদের আমন্ত্রণ করা হবে, তা রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।”