এমনই হাল স্টেশন যাওয়ার পথের। — নিজস্ব চিত্র।
এখনও সে ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়নি কিন্তু যেটুকু হয়েছে, তাতেই ক্যানিঙের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল ছবিটা স্পষ্ট।
সুষ্ঠু নিকাশির অভাবে ক্যানিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে। আর সেই জমা নোংরা জল মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে পথচারীদের। তার উপর যানবাহনের চাকার নোংরা জল ছিটকে নাজেহাল হতে হচ্ছে পথচলতি মানুষকে। এলকাবাসীর ক্ষোভ, শহরের আশপাশের জল নিকাশির জন্য যে সব নালা ছিল, সেগুলির সংস্কার না হওয়ার কারণেই এই অবস্থা। নর্দমা সংস্কার না হওয়ার পাশাপাশি নিকাশি সমস্যা আরও বাড়িয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকানদারেরা প্লাস্টিক, থার্মোকল বা বর্জ্য ফেলার জন্য বেছে নিয়েছেন নর্দমাগুলিকেই। আবর্জনা ফেলার কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করা হয়নি। এর ফলে নিকাশি নালা বুজে যাচ্ছে। আর তার জেরে বৃষ্টির জল বের হতে পারছে না। প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
বেহাল নিকাশির ছবিটা এক ঝলকে কেমন? ক্যানিং মহকুমা সদর দফতর সংলগ্ন এলাকা বা রেল স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় এক হাঁটু জল। তার উপর ক্যানিং রিকশা স্ট্যান্ডের কাছে রাস্তার উপর রয়েছে শৌচালয়। বৃষ্টি হলেই শৌচালয়ের নোংরা জল রাস্তার উপরে চলে আসছে। তা মাড়িয়েই চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টিতেই জল থইথই ক্যানিং ১ ব্লকের মাতলা ১ পঞ্চায়েত লাগোয়া এলাকাও। শুধু তাই নয়, ক্যানিং-বারুইপুর রোডের উপর সেচ দফতরের বাংলোর সামনে পর্যন্ত এক হাঁটু জল। এলাকার মানুষের ক্ষোভ, মহকুমা শহরের নিকাশি ব্যাবস্থা নিয়ে একেবারে উদাসীন প্রশাসন। তার ফলেই বর্ষাকালে তাঁদের এত দুর্ভোগ। সুমনা মণ্ডল, অমিত সরকারের মতো এলাকাবাসী বলেন, ‘‘শহরের জল বেরোনোর নিকাশি নালাগুলি সংস্কার না হওয়ায় বুজে গিয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেও জল বের হতে পারছে না। রাস্তার জমা জল থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। প্রশাসনের কোনও নজর নেই। তা ছাড়া, কয়েকটি জায়গায় নিকাশি নালার উপরে বেআইনি ভাবে গজিয়ে উঠেছে দোকানপাট। তা ছাড়া বাজারের অধিকাংশ আর্বজনা ওই নিকাশি নালার মধ্যে ফেলা হয়।’’
জমা নোংরা জল থেকে নানা রোগের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরও এ বিষয়ে সতর্ক। স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকায় ঘুরছেন। মাতলা ১ পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, গত বছর প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে এলাকার সমস্ত নিকাশি নালা সংস্কার করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে এলাকার সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যাতে প্লাস্টিক, থার্মোকল ব্যাবহার না করেন, তা নিয়ে প্রচারও চালানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাজারের আবর্জনা যেন পঞ্চায়েতের জঞ্জালের গাড়িতে ফেলা হয়। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার জানান, এলাকার মানুষ ও বাজারের ব্যাবসায়ীদের বড় অংশের সদিচ্ছার অভাব থাকায় এলাকার নিকাশি নালাগুলি অবর্জনায় ভরে গিয়েছে। মাতলা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তপন সাহা বলেন, ‘‘গত বছরই আমরা সব নালা সংস্কার করেছিলাম। আবার সেগুলো আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমছে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে ফের নালা সংস্কার করব।’’ ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে মহকুমা শহরের আশপাশের বুজে যাওয়া খালগুলির সঙ্গে নিকাশি নালাগুলিও যাতে দ্রুত সংস্কার করা যায়।’’