বেআইনি: ভাঙা হবে দখল করা জমির উপরে তৈরি এই তেতলা বাড়ি। বজবজ পুরসভা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি জমি দখল করে, সেখানে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে নির্মাণকাজ করেছিলেন পুরসভারই প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান কাউন্সিলর। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সেই অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে বজবজ পুরসভা।
কয়েক মাস আগে বজবজ পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মহম্মদ লুতফর হোসেন সরকারি জমি ও কবরখানা দখল করে অবৈধ নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন মমতা মণ্ডল নামে এক মহিলা। গত মার্চ মাসে সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ ওই বেআইনি নির্মাণ দু’মাসের মধ্যে ভেঙে দিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়
বজবজ পুরসভাকে। বর্তমানে নতুন পুর বোর্ড গঠিত হওয়ার পরে লুতফর শুধুই ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে রয়েছেন। তবে, এই ঘটনার পরে সেই পদেই বা কেন তাঁকে রাখা হবে, সেই প্রশ্ন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে পুরসভার অন্দরেই।
সম্প্রতি পুর বোর্ডের বৈঠকে ওই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ভাঙার কাজ করতে বরাত দেওয়া হয়েছে এক জন ঠিকাদারকে। আদালতের নির্দেশে আপাতত পুরসভার তহবিল থেকেই ওই অবৈধ নির্মাণ ভাঙার খরচ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি জমি ও কবরখানার দখল নিয়ে সেখানে নিজের একটি নার্সিংহোম তৈরি করছিলেন লুতফর। পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, ওই অবৈধ নির্মাণের আশপাশে বেশ কয়েকটি আসবাবপত্রের দোকান রয়েছে। ভাঙার কাজ চলাকালীন সেই দোকানগুলি বন্ধ রাখতে হবে এবং দোকানগুলির সমস্ত জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এমনটাই জানিয়েছেন কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার। সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু দিন দোকান বন্ধ রাখার ক্ষতিপূরণও পুরসভার তহবিল থেকে দিতে হবে।
বজবজ পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বিচারপতির নির্দেশ অনুযায়ী, অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হচ্ছে। কিন্তু সেই কাজের খরচ কে বহন করবে, সে ব্যাপারে আদালত সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলেনি। তাই আপাতত পুরসভার তহবিল থেকেই অবৈধ নির্মাণ ভাঙার খরচ এবং দোকানগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। নির্মাণ ভাঙার পরে আদালতে যে রিপোর্ট দেওয়া হবে, তাতেই খরচের বিষয়টি উল্লেখ করা হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, মঙ্গলবার থেকেই ভাঙার কাজ শুরু হবে। তবে দুর্যোগের পূর্বাভাস থাকায় পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ এগোবে। সপ্তাহখানেক আগেই ওই অবৈধ নির্মাণের আশপাশে থাকা দোকানগুলিকে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। পুর আধিকারিকেরা জানান, তেতলা ওই নির্মাণ ভাঙতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে। ভাঙার খরচ বাবদ প্রাথমিক ভাবে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই অঙ্ক বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, ‘‘ওই অবৈধ নির্মাণ ভাঙার পরে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। তার পরেই পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।’’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলর মহম্মদ লুতফর হোসেন বলেন, ‘‘মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশ। তাই বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। শুধু এটুকু বলব, চড়িয়াল এলাকাতেও এমন শতাধিক অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। আদালতের কাছে আমার আবেদন, সেগুলির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাস মুখোপাধ্যায় (মনু) ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে গঙ্গাজোয়ারা-গড়িয়া স্টেশন এলাকায় পূর্ত দফতরের জমি দখল করে সেখানে দোকান বানিয়ে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের নির্দেশে পূর্ত দফতর এ বিষয়ে নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। নরেন্দ্রপুর থানা জানিয়েছে, পুরসভা ও পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সব অবৈধ দোকান ভেঙে দেওয়া হবে। খুব তাড়াতাড়িই সেই উচ্ছেদ-পর্ব শুরু হবে বলে খবর। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করে তদন্তও শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নরেন্দ্রপুর থানা।