জখম: কৌশিক বৈদ্য। জগদ্দলে। সজল চট্টোপাধ্যায়
টিফিনের সময়ে খেলা চলছিল স্কুলের মাঠে। আচমকা বিকট শব্দ। মুহূর্তে ধোঁয়ায় ঢেকে গেল মাঠ। কান্নার আওয়াজ। শিক্ষকেরা ছুটে এসে দেখলেন, মাঠে পড়ে কাতরাচ্ছে জনা তিনেক পড়ুয়া। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মাঠে পড়ে রয়েছে আরও কয়েক জন।
মঙ্গলবার দুপুরে মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়ায় জগদ্দল থানার হাসিয়া এলাকায়। হাসিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে জখম হয়েছে তিন পড়ুয়া। জগদ্দল থানার পুলিশ জানিয়েছে, একটি কৌটো নিয়ে খেলার সময়ে ফেটে যায় সেটি।
ওই এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও একটি বোমা। পরিষ্কার করার জন্য স্কুল-লাগোয়া একটি নর্দমা থেকে মাটি তুলে স্কুলের মাঠের পাশে রাখা হয়েছিল। সেখানেই ছিল বোমা দু’টি।
ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত পড়ুয়া, অভিভাবক এবং শিক্ষকেরা। জখম পড়ুয়াদের ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতাল থেকে একটি চোখের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও আপাতত পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হয়েছে।
এর আগেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে প্রাথমিক স্কুল চত্বরের মধ্যে বোমা মিলেছে। বোমা ফেটে শিশু জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ভাটপাড়া এবং কাঁকিনাড়া এলাকায়। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে হাড়োয়ায় ফুল তুলতে গিয়ে বোমায় একটি হাত উড়ে গিয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া এক বালিকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন টিফিনের সময়ে মিড-ডে মিল খাওয়ার পড়ে পড়ুয়ারা স্কুলের মাঠে খেলতে যায়। কাউগাছি ২ পঞ্চায়েত থেকে এলাকার নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। নালার জঞ্জাল এবং মাটি তুলে রাখা হচ্ছে রাস্তার ধারে। ওই রাস্তার পাশেই হাসিয়া স্কুলের মাঠটি। খেলার সময়ে বল এসে পড়ে ওই জঞ্জালের উপরে। বল কুড়োতে এসে এক পড়ুয়া একটি চকচকে কৌটো কুড়িয়ে পায়। সেটি নিয়ে খেলতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে।
প্রধান শিক্ষক সুচন্দ্রা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমি অফিস ঘরে বসেছিলাম। আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে উঠল স্কুল। দেখলাম, সারা মাঠ ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। বাচ্চারা আতঙ্কে চিৎকার করছে। ধোঁয়া সরতে ছুটে গিয়ে দেখি, কৌশিক বৈদ্য নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের মুখ পুরো ঝলসে গিয়েছে। বাকিদের মুখ-চোখ হলুদ হয়ে গিয়েছে।’’
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসেন এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁরাই প্রথমে বরফ এবং ঠান্ডা জল দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। পরে কৌশিককে ব্যারাকপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসার পরে সেখান থেকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়।
কৌশিকের বাবা কমল বলেন, ‘‘ছেলের চোখে সমস্যা হচ্ছিল। তাই কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাইনি। ব্যারাকপুরের বেসরকারি চোখের হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। ডাক্তারবাবুরা বলেছেন, নিয়মিত নজর রাখতে। আপাতত তাই করব।’’ কমল জানান, তাঁর ছেলে এতটাই আতঙ্কিত যে বারবার শিউড়ে উঠছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তাঁরাও আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আর যে বোমা নেই, তা কী করে বুঝব! বাচ্চাদের নিয়ে স্কুল করি। ফের কোনও অঘটন ঘটলে কী হবে?’’ পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে আর একটি ছাড়া আর কোনও বোমা মেলেনি। কে বা কারা ওখানে বোমা রাখল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।