প্রতীকী ছবি।
ছেলের পড়ায় মন বসে না। পালিয়েছিল বাড়ি থেকে। পৌঁছে যায় তামিলনাড়ু। সেখানেই পুলিশের চোখে পড়ে বছর চোদ্দোর কিশোর। হাবেভাবে তাঁরা বুঝে যান, বাড়ি থেকে পালিয়েছে ছেলে। খবর আসে বাড়িতে। তামিনলাড়ুর একটি হোমে আপাতত রাখা হয়েছে ছেলেটিকে। মা তাকে ফিরিয়ে আনতে রওনা দিয়েছেন হিঙ্গলগঞ্জের বাড়ি থেকে।
১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় ঋত্বিক ঘটকের ছবি, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’। মুখ্য চরিত্র কাঞ্চনও পালিয়ে গিয়েছিল তার স্বপ্নের শহর কলকাতায়। তার ছিল ঘোরার নেশা। ছোট্টুরও খানিকটা তাই। পড়াশোনা করতে তার ভাল লাগছিল না। যা হোক কিছু একটা কাজ জোগাড়ের আশাতেই বাড়ি ছাড়ে রবিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে ছোট্টু হাসনাবাদ স্টেশনে পৌঁছয়। সেখান থেকে বাড়িতে ফোন করে জানায়, সে শিয়ালদহ যাচ্ছে, সন্ধ্যায় ফিরবে। কিন্তু রাতে হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠে মাকে ফোনে জানায়, তামিলনাড়ুর ট্রেনে উঠেছে। কয়েকজন দাদার সঙ্গে যাচ্ছে শ্রমিকের কাজে।
মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির এক হোম থেকে ফোন আসে ছোট্টুর মায়ের কাছে। জানানো হয়, ট্রেন থেকে নামার পরে ছোট্টুকে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পারে, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে সে। তাকে একটি হোমে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়।
হোম থেকে যোগাযোগ করা হয় বাড়িতে। জানানো হয়, প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র-সহ বাবা অথবা মাকে আসতে হবে ছেলেকে নিয়ে যেতে। সেই সঙ্গে ওই ছাত্র যে স্কুলে পড়ে, সেখানকার প্রধান শিক্ষককে লিখিত ভাবে জানাতে হবে, তিনি ছাত্রকে স্কুলে ফেরাতে চান।
খবর পেয়ে ছোট্টুর অসুস্থ বাবা বুধবার স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানান। তিনি চিঠি লেখা-সহ সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।
ছোট্টু পড়ে নবম শ্রেণিতে। তার বাবা জানান, লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় মন চলে গিয়েছে ছেলের। মোবাইল নিয়েই মেতে থাকত সারাদিন। স্কুল খেলার পরে দু’একদিন স্কুলে এসে আর ক্লাসে ফিরতে চায়নি সে। ছেলের ইচ্ছে, টাকা রোজগার করে এটা ওটা কিনবে। ছোট্টুর বাবা জানান, পরিবারে আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তিনি নিজে অসুস্থ। স্ত্রী বিড়ি শ্রমিকের কাজ করেন। তবে তাঁরা চান, ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাক।
ছোট্টুর মা টেলিফোনে বলেন, ‘‘পড়ায় মন বসত না ছেলের। কিন্তু আমরা কখনও চাইনি, ও পড়া ছেড়ে দিক।’’ তিনি জানালেন, কাছে যে ক’টা টাকা আছে, তাতে যাওয়ার খরচটুকু হচ্ছে। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে ফেরার টাকা নেই হাতে। তামিলনাড়ুতে ক’দিন থেকে কিছু কাজ করে টাকা হাতে এলে ফিরতে পারবেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে চাইল্ড লাইনকে। না হলে শুধু অভিভাবক বা শিক্ষকদের পক্ষে শিশুশ্রম আটকানো সম্ভব নয়।’’
প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, মা-ছেলের ফেরার খরচ তাঁরা দিয়ে দেবেন। ছেলেটিকে স্কুলে ফিরিয়ে বিশেষ ভাবে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।