প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে নির্দেশ বনগাঁ পুরসভার   

দিন কয়েক আগে পুরসভার অচলাবস্থা কেটেছে। তারপরই পুরসভা জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে জোর কদমে কাজ শুরু করেছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০৫:২৭
Share:

দোকানে প্লাস্টকেই জিনিসপত্র দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে। বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পদক্ষেপ করল বনগাঁ পুরসভা। মাইকে জোর কদমে প্রচার চালানো হচ্ছে। শহরবাসী ও ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে, ‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করুন।’ পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা না হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।

Advertisement

পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘কয়েকদিন প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হচ্ছে। কাজ না হলে পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ধরপাকড় শুরু করা হবে।’’ প্রচারের পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহারের উপর পুর কর্তৃপক্ষ নজরদারিও চালাচ্ছেন।

২০১৭ সালে পুরসভা এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন। তারপর থেকে পুরসভা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়। বাজার-হাটে, দোকানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। বাসিন্দারা জানালেন, লোকসভা ভোটের সময় থেকে ফের শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। তবে মাস দু’য়েক পুরসভার নজরদারিও ছিল না। সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরা ফের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার শুরু করেন। মানুষও সচেতন নন। তাঁরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ চেয়ে নিয়ে থাকেন।

Advertisement

দিন কয়েক আগে পুরসভার অচলাবস্থা কেটেছে। তারপরই পুরসভা জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে জোর কদমে কাজ শুরু করেছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পুর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসতেই বাজারহাটে ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন না। তবে বাজারগুলোতে বিক্রেতারা কাপড়ের ব্যাগের সঙ্গে দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগও রাখছেন। গোপনে তাতে মাছ আনাজ দিচ্ছেন। মিষ্টির দোকানে রসগোল্লা কিনতে গিয়েছিলেন এক যুবক। রসগোল্লা চাইতেই দোকানের কর্মচারী একটি প্লাস্টিকের ক্যারিবাগের মধ্যে রস-সহ রসগোল্লা ভরে যুবকের হাতে তুলে দিলেন।বনগাঁ শহরের মিষ্টির দোকান, মুদি দোকানে এবং খাবারের দোকান হোটেল রেস্তোরাঁয় এখনও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে।

স্থানীয় ট বাজার, নিউ মার্কেট, কালীবাড়ি বাজার, নেতাজি মার্কেট, রেলবাজার, চাঁপাবেড়িয়া বাজারে বিক্রেতারা প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার না করলেও গোপনে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করছেন। এক মাছ বিক্রেতা গোপনে এক ক্রেতাকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে মাছ দিচ্ছিলেন। বললেন, ‘‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের বদলে আমরা যে ব্যাগ ব্যবহার করছি, তার একটির দাম এক টাকা। ব্যাগগুলো পাতলা। ক্রেতাদের কম করে দু’টো করে ব্যাগ দিতে হচ্ছে। ক্রেতারা ব্যাগের বাড়তি দাম দিতে চান না। ফলে লাভ অনেকাংশে কমে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে গোপনে প্লাস্টিকের ব্যাগ দিতে হচ্ছে।’’

বাজারে প্লাস্টিক প্রকাশ্যে বন্ধ হলেও কিছু মিষ্টির দোকান, মুদি দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে প্রকাশ্যেই মালপত্র দেওয়া হচ্ছে। খাবারের দোকানে রুটির সঙ্গে গরম তরকারি প্লাস্টিকের ব্যাগে দেওয়া হচ্ছে। মুদির দোকানে সর্ষের তেল, চিনি, হলুদও প্লাস্টিকের ব্যাগে দিচ্ছেন কিছু দোকানি।

পরিবেশ কর্মীরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার একশো শতাংশ বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্লাস্টিকের কাপে গরম চা খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর তা জানেন না অনেকেই। তাই প্লাস্টিকের কাপে অনায়াসে চলছে চা খাওয়া। তবে শহরের বেশ কিছু চায়ের দোকানে অবশ্য মাটির ভাঁড়, কাচের গ্লাস ও কাগজের কাপেই চা খাচ্ছেন।

প্লাস্টিকের কাপে গরম চা খেলে কী হতে পারে?

চায়ের প্লাস্টিকের কাপ থেকে মুখে ও লিভারে ক্যানসার ছড়ায় বলে দাবি আমেরিকার গবেষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই ধরনের কাপ তৈরি হয়, মূলত মাইক্রোপ্লাস্টিক দিয়ে। এতে থাকা টক্সিক পদার্থ ক্যানসারের অন্যতম কারণ। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এত প্রচারের পরও মানুষের সচেতন না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement