হিসেব: বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বাইরে। নিজস্ব চিত্র
রাত তখন ১০টা। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর হঠাৎ রক্তের প্রয়োজন হল। আত্মীয়-স্বজনেরা ছুটলেন হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। ব্লাডব্যাঙ্ক বন্ধ। কোনও কর্মীও নেই। ফোন নম্বর জোগা়ড় করে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্ত্যবরত কর্মীকে ফোন করা হল। তিনি তখন শৌচালয়ে। ফলে ব্লাডব্যাঙ্কে আসতে দেরি হল। ততক্ষণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ।
এই ঘটনার পরে রোগীর আত্মীয়েরা চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করেন। হাসপাতালে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। দিন কয়েক আগের ঘটনা।
তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে বলে আশা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ, সম্প্রতি হাসপাতালে চালু হয়েছে ২৪ ঘণ্টার ব্লাডব্যাঙ্ক পরিষেবা। সব সময়ে সেখানে কর্মীও থাকবেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক খোলা থাকত, সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। তারপরে কোনও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে ‘অনকলে’ কর্মীরা এসে ব্লাডব্যাঙ্ক খুলে রক্ত দিতেন। এতে কিছুটা সময় লেগেই যেত। যা নিয়ে রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যেত।
মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ইনচার্জ তথা চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘মহকুমার প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা মাথায় রেখে ২৪ ঘণ্টা ব্লাডব্যাঙ্ক চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে রক্তের যাবতীয় পরীক্ষাও চালু হয়েছে।’’
হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে এখন পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ানও রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা ব্লাডব্যাঙ্ক চালু হওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লাডব্যাঙ্কের বাইরে প্রতিদিন ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা থাকছে, কোন কোন গ্রুপের কত পরিমাণ রক্ত মজুত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্লাডব্যাঙ্কে এখন পর্যাপ্ত রক্ত মজুত থাকে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলার অন্য হাসপাতালগুলিতেও রক্তের জোগান দিচ্ছেন। গোপালবাবু বলেন, ‘‘সম্প্রতি বসিরহাট জেলা হাসপাতাল ও ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতালে এখান থেকে আমরা রক্ত পাঠিয়েছি।’’ সারা বছর ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন এলাকায় রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করছে। হাসপাতালের তরফে সাধারণ মানুষকে রক্তদান শিবির করতে উৎসাহও দেওয়া হয়। ওই শিবিরের ফলেই রক্তের ঠিকঠাক জোগান মিলছে।