দেওয়াল লেখা চলছে বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
ভোটের দেওয়াল লিখন শুরু করে দিল বিজেপি। ‘আমপান দুর্নীতির সরকারকে পরাজিত করতে পদ্মফুলে ভোট দিন’— গাইঘাটা ব্লকের চাঁদপাড়া ও ডুমা পঞ্চায়েত এলাকায় এমনই দেওয়াল লিখন চোখে পড়ছে।
বিধানসভার ভোটের আরও কয়েক মাস বাকি। প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়নি। কিন্তু তার আগেই বিজেপির দেওয়ার লেখা দেখে কৌতূহল তৈরি হয়েছে নানা মহলে। দেওয়াল লিখনে প্রার্থীর নাম না থাকলেও দলের প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গাইঘাটার বাসিন্দা, বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘রাজ্যে বিধানসভা ভোটে এ বার আমরা ক্ষমতায় আসছি। সে কারণেই আগে থেকে ভোটের প্রচার শুরু করলাম।’’
রাজনৈতিক মহল অবশ্য মনে করছেন, এটা বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাশাপাশি দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে প্রচারের কাজটা এগিয়ে রাখতে চাইছে তারা। এ ভাবে জনমানসেও প্রভাব ফেলতে চাইছে পদ্মশিবির।
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবল গাইঘাটা ব্লক নয়, জেলা জুড়েই ভোটের প্রচার শুরু করা হয়েছে দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৪৫০টি বুথ আছে। প্রতিটি বুথে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৫টি করে দেওয়াল লিখতে। কোনও অবস্থায় একটি বুথে ৫টির বেশি দেওয়াল লেখা যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বুথ কর্মীদের ভোটের আগে সক্রিয় ও সচল রাখতে দেওয়াল লিখন শুরু করা হয়েছে।’’
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, অতীতে পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটের আগে দেখা গিয়েছে, শাসক তৃণমূল বিরোধীদের দেওয়াল লিখনে বাধা দিয়েছে। বা জোর করে দেওয়াল লিখেছে। আগে থেকে দেওয়াল লিখে বিজেপি দেওয়ালের উপরে দখল রাখতে পারবে। দেওয়াল লেখাগুলি দেখে স্পষ্ট, বারাসত জেলায় বিজেপি এ বার আমপান দুর্নীতির অভিযোগকে প্রচারে তুলে ধরতে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বারাসত সাংগঠনিক জেলায় বিজেপি নেতৃত্ব প্রতিটি মণ্ডল কমিটি এলাকায় নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল। সেখানে পুরনো ও নতুন বিজেপি কর্মীদের বিজেপির নীতি-আদর্শের পাঠ দেওয়া হয়েছিল। এ বার শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন।
বসে নেই শাসকদল তৃণমূলও। সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁ মহকুমায় দলীয় সাংগঠনিক ব্লক ধরে ধরে বিজয়া সম্মিলনী ও রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন করা হয়েছে। ভোটের আগে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে তৃণমূলের ওই পদক্ষেপ। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় ৯টি ব্লক ও শহর কমিটির সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল, পুরনো বসে যাওয়া কর্মীদের ফের দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভাবে নিয়ে আসা। অন্য দলগুলি থেকে বেশি করে কর্মীদের তৃণমূলে যোগদান করানোও লক্ষ্য থাকছে। লোকসভা ভোটে মহকুমার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে ছিলেন। মহকুমায় তৃণমূল শক্তিশালী করতে প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠকে কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে। তাঁর হাতের সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। গোপাল বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সম্মেলনগুলিতে পুরনো বসে যাওয়া তৃণমূল কর্মীদের দলের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অন্য দল থেকে কর্মীদের তৃণমূলে যোগদান করানো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই দল এখন আরও শক্তিশালী হয়েছে।’’