পদ্মের উত্থান হল। কিন্তু সিপিএম তথা বামেরা কার্যত ধুয়ে মুছে গেল বনগাঁ মহকুমাতে।
২০০৮ এর পঞ্চায়েত ভোট থেকে এই মহকুমা শাসকদলের খাসতালুকে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেও এতদিন সিপিএম এখানে বরাবরই মোটামুটি ফল করে এসেছে। ব্যতিক্রম এ বার।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে মহকুমার ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামেরা পেয়েছিল ১২টি পঞ্চায়েত। বনগাঁ ব্লকে ৫টি, গাইঘাটা ব্লকে ৪টি ও বাগদা ব্লকে ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেরা আসন দখল করেছিল। পরে অবশ্য শাসকদল অনাস্থা ভোটে জিতে বা বাম সদস্যদের নিজেদের দলে নিয়ে এসে বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত বামেদের দখলে ছিল ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত।
সিপিএমের অভিযোগ, তাঁদের বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বনগাঁ বিডিও অফিস থেকে তাঁদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকী তাঁদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে বলেও অভিযোগ। এক প্রার্থীর বাড়ির সামনে রাতের অন্ধকারে থান কাপড় পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, ভোটের দিন মহকুমা জুড়ে অবাধে বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূল। প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষকে পর্যন্ত মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে বিজেপিরও। কিন্তু তার মধ্যেও এ বার মহকুমাতে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তারা। পঞ্চায়েতে দু’শোর বেশি আসন পেয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ১১৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১৯টি আসন। কিন্তু সেখানে সিপিএম তথা বামেরা পঞ্চায়েতে পেয়েছে মাত্র ১৭টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে বামেরা কোনও খাতা খুলতে পারেনি। মহকুমাতে বামেদের কিছুটা ভাল ফল হয়েছে বাগদা ব্লকে। সেখানে তাঁরা পঞ্চায়েতের ১৯০টি আসনের মধ্যে পেয়েছে ১১টি আসন।
কী কারণে বামেদের এই হার? সিপিএম জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী মনে করেন, শাসকদলের সন্ত্রাসের জন্যই এই হাল হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য অনেকেই ভোট থেকে সরে গিয়েছেন। তা ছাড়া বনগাঁয় আমাদের দলের সংগঠকেরা মানুষকে অনেক ক্ষেত্রে বোঝাতে পারেননি।’’ পাশাপাশি কিছু মানুষের মনে হয়েছে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিজেপি তাঁদের ভরসা দিতে পারবে। কারণ কেন্দ্রে বিজেপি রয়েছে বলে তিনি জানান।
মহকুমার বাগদা ব্লকে ফরওয়ার্ড ব্লকের বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে। কিন্তু এ বার তাঁরাও একটি মাত্র আসন পেয়েছে সেখানে। কেন এমন হার? দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলের নেতৃত্বের অভাবই এর একমাত্র কারণ। শাসকদলের ভোট লুঠ আমরা ঠেকাতে পারিনি।’’ বাস্তব চিত্র হল, নিচু তলায় মহকুমার বহু এলাকায় বিরোধীরা জোট তৈরি করেছিল। সিপিএম তথা বামেরা সব আসনে প্রার্থী দেয়নি। যেমন জলেশ্বর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বামেরা কোনও প্রার্থী দেয়নি। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘আমরা ওখানে প্রার্থী দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিচু তলার কিছু নেতা কর্মীরা বিজেপির সঙ্গে জোট তৈরি করে ফেলেছে।’’ কিছু বাম কর্মী সমর্থকদের একাংশ মনে করেন, যেখানে সিপিএম জিততে পারবে না বলে মনে করছে সেখানে বিজেপিকে সমর্থন করছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপিকে সমর্থন করতে গিয়ে বামেরা ধুয়ে মুছে গিয়েছে।’’