প্রার্থিপদ ঘোষণা না করেই মনোনয়ন জমা তৃণমূলের

আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা না হলেও সোমবার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার মনোনয়ন জমা করে দিলেন তৃণমূলের ২০ জন প্রার্থী। এ দিন এই উপলক্ষে বারাসতে জেলাশাসকের কার্যালয়ে আসেন তাঁরা। কেন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হল না? দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অশোকনগরে প্রার্থী পদ নিয়ে এর আগে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০১:৫১
Share:

আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা না হলেও সোমবার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার মনোনয়ন জমা করে দিলেন তৃণমূলের ২০ জন প্রার্থী। এ দিন এই উপলক্ষে বারাসতে জেলাশাসকের কার্যালয়ে আসেন তাঁরা।

Advertisement

কেন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হল না? দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অশোকনগরে প্রার্থী পদ নিয়ে এর আগে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। প্রার্থী বাছাই সভায় দু’দল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক মারপিটেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিদায়ী পুরপ্রধান সমীর দত্ত ও বিদায়ী উপ পুরপ্রধান প্রবোধ সরকারের অনুগামীদের মধ্যে বিরোধও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আশ্বস্ত করেছিলেন, প্রার্থী পদ নিয়ে কোনও সমস্যা থাকবে না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রার্থী পদ ঘোষণা করা হলেও তা নিয়ে যদি ক্ষোভ-বিক্ষোভ ফের প্রকাশ্যে আসে, তা নিয়েও উগ্বিগ্ন ছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সে জন্যই এ দিন প্রার্থী পদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করার রাস্তাতেই হাঁটেননি তাঁরা। জ্যোতিপ্রয়বাবু এ ব্যাপারে বলেন, “এই জেলার পুরসভাগুলির জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে না, এটাই দলের সিদ্ধান্ত। যেখানে প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত হয়েছে, সেখানে মনোনয়ন জমা দেওয়া হচ্ছে।” বনগাঁর ক্ষেত্রে অবশ্য এ দিনই মনোনয়ন জমা দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়েই তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের একাংশের ব্যাখ্যায়, প্রার্থী পদ নিয়ে অশোকনগরের মতো জটিলতা তৈরিই হয়নি।

পুরসভার মোট আসন সংখ্যা ২৩টি। বাকি তিন জন প্রার্থী মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায়। এ দিন গাড়ি ভর্তি করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বারাসতে যান বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীরা।

Advertisement

২০১০ সালে প্রথমবারের জন্য তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতা দখল করেছিল। ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে তারা দখল করেছিল ২০টি ওয়ার্ড। চেয়ারম্যান হন সমীর দত্ত। ভাইস চেয়ারম্যান হন প্রবোধ সরকার। এ বার আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩টি।

ধীমানবাবু বলেন, “১, ১৫, ও ২১ নম্বরের ওয়ার্ডের প্রার্থীরা মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ওই প্রার্থীরা হলেন উপল তালুকদার, কৃষ্ণা চক্রবর্তী ও মিলন মল্লিক।”

দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, গত বারের ২০ জন জয়ী কাউন্সিলরের মধ্যে এ বার প্রার্থী হয়েছেন ১৬ জন। তিন জন কাউন্সিলর নিজে প্রার্থী না হলেও তাঁদের পরিবারের কেউ প্রার্থী হয়েছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গায়ত্রী মুখোপাধ্যায় শুধু দলীয় টিকিট পাননি। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁকে বয়সজনিত কারণেই প্রার্থী করা হয়নি। গত বার ১০ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড দু’টি পেয়েছিল সিপিএম। বাকিগুলি পায় তৃণমূল। ১ নম্বর ওয়ার্ডটি এ বার তপসিলি সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত হয়েছে। সেখানকার কাউন্সিলর দীপ্তি তালুকদারের পরিবর্তে দল প্রার্থী করেছে তাঁর স্বামী তথা ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর উপল তালুকদারকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ মহিলা হিসাবে সংরক্ষিত। কাউন্সিলর নান্টুরঞ্জন রায় তাই এ বার দাঁড়াতে পারেননি। দল তাঁর বদলে নান্টুবাবুর বৌমা দেবশ্রীকে প্রার্থী করেছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা দাসের পরিবর্তে দল এ বার ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে তাঁর স্বামী জয়দেব দাসকে।

এ ছাড়া, নিজের ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় কাউন্সিলরদের অন্যত্র প্রার্থী করা হয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। যেমন ভাইস চেয়ারম্যান প্রবোধবাবুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ মহিলা হিসাবে সংরক্ষিত হওয়ায় দল তাঁকে প্রার্থী করেছে ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরকে সেখান থেকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দল প্রার্থী করেছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্রীকান্ত চৌধুরীকে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সময় হীরাকে প্রার্থী করা হয়েছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটি সাধারণ মহিলা হিসাবে সংরক্ষিত হওয়ায় কাউন্সিলর অসিত দে দাঁড়াতে না পারলেও দল ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে তাঁর স্ত্রী শীলা দে-কে। তবে পুর চেয়ারম্যান সমীরবাবু ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অতীশ সরকারের (ঝুঙ্কু) মতো কেউ কেউ নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পেরেছেন। এ বার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখের সংখ্যা ৭টি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জয় রাহা। তিনি এ বার তৃণমূলের সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থীও বটে। সঞ্জয়বাবু ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়াও, উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ হলেন মিঠু ভট্টাচার্য, দেবশ্রী রায়।

এ দিন দলের পতাকা লাগানো গাড়ি নিয়ে ধীমানবাবু জেলাশাসকের অফিসে ঢুকে পড়ায় কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। তবে ওই পতাকা সঙ্গে সঙ্গেই খুলে ফেলা হয় বলে জানিয়েছেন বিধায়ক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement