Barasat

ঋণের চক্রব্যূহে যুবক, আত্মঘাতী পাওনাদারের চাপে

সুইসাইড নোটে তাঁর মৃত্যুর জন্য তিন জনকে দায়ী করেছিলেন ভজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০৬:১৬
Share:

ভজন বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র

লকডাউনে কাজ গিয়েছিল। চড়া সুদে টাকা ধার করে পাওনাদারদের হাতে একে একে খোয়াতে হয়েছিল মোটরবাইক, সাইকেল এবং মোবাইল ফোন। শেষ পর্যন্ত প্রাণটাও গেল বারাসতের কাজিপাড়ার প্রমোদনগর এলাকার বাসিন্দা ভজন বিশ্বাসের (২৬)। রবিবার রাতে নিজের ঘর থেকেই ঝুলন্ত দেহ মেলে তাঁর। ৩৫ হাজার টাকা ধার নেওয়ায় দৈনিক ৪৫০ টাকা সুদ দিতে হত ভজনকে।

Advertisement

সুইসাইড নোটে তাঁর মৃত্যুর জন্য তিন জনকে দায়ী করেছিলেন ভজন। সে কথা জানাজানি হতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁর পরিজন এবং এলাকার বাসিন্দারা। ভজনের দাদা সাধন বিশ্বাস সোমবার বারাসত থানায় ওই তিন জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ জানান।

সোমবার রাতে পুলিশ তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হল শুভঙ্কর (টাইসন) কর্মকার, যুগল পাল এবং প্রবীর রায়। তিন জনই স্থানীয় বাসিন্দা। তারা এলাকায় একটি সুদের কারবারের চক্র চালাত বলে অভিযোগ। টাইসনই ছিল সেই চক্রের পাণ্ডা। সাধনের অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে তাঁর ভাইকে।

Advertisement

ভজনের বাবা গোবিন্দ বিশ্বাস জানান, মাস কয়েক আগে তাঁর ছেলে একটি ওষুধ সংস্থায় বাড়ি বাড়ি সরবরাহের কাজ পান। প্রথমে সাইকেলে চেপেই কাজ করতেন তিনি। পরে একটি বাইক কেনার দরকার হয়ে পড়ে। সেই জন্যই টাইসনদের কাছে ৩৫ হাজার টাকা ধার করেন। শর্ত ছিল রোজ ৪৫০ টাকা সুদ দিতে হবে।

তদন্তকারীরা জানান, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না মেলায় কাজ টিকিয়ে রাখতে মাসিক সাড়ে আটত্রিশ শতাংশ হারে সুদে টাকা ধার নেন তিনি। প্রথমে কিছু দিন সুদ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৫ হাজার টাকার মাসিক বেতনে বেশি দিন টানতে পারেননি। কারণ, সুদ মিটিয়ে আসল টাকা যে ওই বেতনে মেটানো অসম্ভব, তা বুঝে গিয়েছিলেন ভজন।

সাধনবাবু বলেন, “সুদের টাকা এক দিন দিতে না পারলে ওরা শাসিয়ে যেত। ভাই আমাকে সে কথা বলেছিল। লকডাউনে ওর কাজ চলে যায়। এক দিন ওরা ভাইয়ের বাইকটা কেড়ে নেয়। তাতেই তো টাকা শোধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার পরেও ওর সাইকেল কেড়ে নেয় টাইসনেরা। এক দিন ওর মোবাইলও কেড়ে নিল। গত কয়েক দিন ধরে ওকে মনমরা দেখছিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম। বলল, মরা যাওয়া ছাড়া ওর আর কোনও পথ নেই। বার বার বললাম আমরা আছি। তুই অন্য জায়গায় চলে যা। ধারের টাকা ধীরে ধীরে শোধ হবে। কিন্তু মরার কথা ভাবিস না। কিন্তু, টাইসনেরা ওকে মেরে ফেলল।”

পুলিশ যে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে, তার নীচে ভজনের সই রয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘সুদের টাকা দিতে না পারায় আমাকে টাইসনেরা গালাগালি করছে। মায়ের নামে রোজ নোংরা কথা বলছে। মারধর করছে। আমি রোজ রোজ এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। পুলিশ যেন এর বিচার করে। টাইসনের মতো লোক যেন সমাজে আমার মতো আর কাউকে মানসিক অত্যাচার না করতে পারে। লকডাউনে সুদ দিতে পারছিলাম না বলে আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিত। আমার ফোনে কল রেকর্ড রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement