ফাইল চিত্র।
মানুষের অভিযোগ শুনতে বারাসত পুলিশ জেলায় তাঁদের কাছেই পৌঁছে যাবেন আইনরক্ষকেরা। থানার ওসি কিংবা আইসিকে নিয়ে পুলিশকর্তারা এলাকায় উপস্থিত হবেন একটি নির্ধারিত দিনে। স্থানীয় নাগরিকদের অভিযোগ শোনা হবে সেখানে। কেউ কোনও বিষয়ে অভিযোগ জানাতে চাইলে তৎক্ষণাৎ তা নথিভুক্ত করা হবে। তদন্ত শুরু করার নির্দেশও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। কোভিড পরিস্থিতিতে ‘সম্পর্ক’ নামের এই প্রকল্প জুলাই থেকে চালু হবে বলে জানাচ্ছে বারাসত পুলিশ জেলা।
অনেক সময়েই শোনা যায়, থানা অভিযোগ নেয়নি। সেই খবর বহু ক্ষেত্রে পৌঁছয় না পুলিশের উপর মহলে। যেমন, সম্প্রতি বারাসত পুলিশ জেলা এলাকায় এক ব্যক্তি ও এক মহিলাকে গাছে বেঁধে পেটানো হয়। মহিলার গায়ে দই ঢেলে দেওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়েও স্থানীয় থানা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ। সেই খবর সামনে আসায় পুলিশের কর্তাদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় থানা এক প্রত্যক্ষদর্শীকে খুঁজে বার করে অভিযোগ দায়ের করে। দু’জন গ্রেফতারও হয়। অতএব, এ যে এক ভাবে থানার উপরেও নজরদারি, তা মানছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ।
যদিও পুলিশকর্তাদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, এই প্রকল্প চালুর অন্যতম কারণ, কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক সময়ে থানায় পৌঁছতে পারছেন না। বিশেষত, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা যানবাহনের অভাবে থানায় যেতে পারেন না। ওই পুলিশ জেলার কর্তারা জানাচ্ছেন, এই ধরনের সমস্যার কথা জানিয়ে জেলা পুলিশের কাছে অনেকেই পিটিশন পাঠিয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশি ব্যবস্থাকে মানুষের নাগালে নিয়ে যেতে এই উদ্যোগ। থানায় না এসেও মানুষ তাঁর অভিযোগ পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন।”
আপাতত ঠিক হয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকেই কাজ শুরু হবে। সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসারদের (এসিডিপিও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে সপ্তাহে দু’দিন ওসি বা আইসিদের নিয়ে হাজির থাকতে। প্রতিদিন একটি করে পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের থেকে অভিযোগ সংগ্রহ করা হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসেই বসবে পুলিশ-জনতা দরবার। পঞ্চায়েত অফিসের ক্যালেন্ডারেও ওই দরবারের দিন নির্ধারিত করা থাকবে। এর পরে ধীরে ধীরে ওই ব্যবস্থা চালু করা হবে পুর এলাকাতেও। সেই সঙ্গে থানায় অভিযোগ নেওয়ার বরাবরের ব্যবস্থাও বহাল থাকবে।
এক পদস্থ পুলিশ অফিসার জানান, এই ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ পুলিশকর্তাদের নজরেও থাকবে। তাতে তদন্তের প্রকৃতি লঘু হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
যদিও প্রশ্ন উঠছে, থানা কোনও কারণে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করলে, ওসি কিংবা আইসির সামনে এসডিপিও-র কাছে সেই অভিযোগ দায়ের করার সাহস ক’জন পাবেন। এসডিপিও-র সঙ্গে অভিযোগকারীর আলাদা ভাবে আলাপচারিতার অবকাশ থাকবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে মানুষের মনে।