দেবদাস মণ্ডল। —ছবি সংগৃহীত।
জল্পনাই সত্যিই হল!
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার নতুন জেলা সভাপতি হিসাবে বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই কানাঘুষো চলছিল, দেবদাস জেলা সভাপতি হতে চলেছেন। কিছু দিন আগে ঠাকুরনগর স্টেশনে দেবদাসকে জেলা সভাপতি না করার জন্য রাতের অন্ধকারে পোস্টারও পড়েছিল।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে কোন্দল বার বার প্রকাশ্যে এসেছিল। পঞ্চায়েত ভোটেও বিজেপি এই সাংগঠনিক জেলায় খারাপ ফল করেছে। বনগাঁ মহকুমার ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ছিল মাত্র ৫টিতে। যদিও গত বিধানসভা ভোটের ফলাফলে বিজেপি এগিয়ে ছিল প্রায় ২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে।
বিধানসভায় বনগাঁ মহকুমার ৪টি আসনেই বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। যদিও দলের একাংশের মতে, বুথভিত্তিক সংগঠন মজবুত করা যায়নি। সংগঠন মজবুত থাকলে সন্ত্রাস মোকাবিলা করে বিজেপি আরও ভাল ফল করত।
এই আবহে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসাবে রামপদ দাসকে সরিয়ে দেবদাসকে নতুন সভাপতি করা হল। ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত রামপদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন। বিজেপি কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, রামপদ সংগঠন মজবুত করার সুযোগ পাননি। তাঁকে নিজের মতো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। দলের একাংশের বাধার মুখে তাঁকে পড়তে হয়েছে। তিনি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানোর পুরোপুরি সুযোগ পাননি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, দেবদাসেরা তাঁকে এড়িয়ে চলতেন বলে দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে। কার্যত এক সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যেত না। এক পক্ষের কর্মসূচিতে রামপদ ব্রাত্য থাকতেন। তবে বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে রামপদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে।
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, রামপদকে জেলা সভাপতি হিসাবে শান্তনু ঠাকুরেরা প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারেননি। ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বৈঠক করে তাঁরা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে রামপদকে পদ থেকে সরানোর দাবিও করেছিলেন। রামপদ সভাপতি হয়েই ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন শান্তনুর সঙ্গে দেখা করতে। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে শান্তনুর দেখা হয়নি। যদিও তারপরেও দীর্ঘ দিন রামপদের উপরেই ভরসা রেখেছিল দল। রামপদ এ দিন সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।"
দেবদাস শান্তনুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ দিন সভাপতি হিসাবে দেবদাসের নাম ঘোষণার পরেই মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে শান্তনু ও সুব্রত দেবদাসকে সংবর্ধনা দেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে শান্তনুর দাবি মতো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেবদাসকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেবদাসকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কর্মীদের একাংশ চুপ। তাঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। লোকসভা ভোটের আগে গোষ্ঠীকোন্দল সামাল দেওয়াই দেবদাসের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।
দেবদাস এ দিন বলেন, "সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করব। লোকসভা ভোটে বিজেপিকে এখান থেকে ২ লক্ষের বেশি ব্যবধানে জয়ী করব। এ দিন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।" শান্তনুর কথায়, "দেবদাস মণ্ডলের সভাপতি হওয়া খুবই খুশির খবর। এর ফলে আমাদের জেলায় ভাল ভাবে কাজ করতে পারব। দলের শক্তিবৃদ্ধি হবে।"
বিজেপির নতুন জেলা সভাপতি হিসাবে দেবদাসকে আনার সিদ্ধান্তকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটে এখানে মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখান করেছেন। দেবদাস জেলা সভাপতি হওয়ায় আগামী ছ’মাসের মধ্যে ওদের দলটাই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।"
অন্য দিকে, বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি হলেন তরুণকান্তি ঘোষ। তাঁর বাড়ি দেগঙ্গায়। এত দিন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন তাপস মিত্র। তাপস বলেন, "সভাপতি বদল হওয়া আমাদের দলের পরম্পরা। বিজেপি তো আর ওয়ান ম্যান পার্টি নয়। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নিতে হয়। নতুন যিনি সভাপতি হয়েছেন, তাঁকে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করে আমরা দলকে এগিয়ে নিয়ে যাব।" দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তাপস সভাপতি থাকার সময়ে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি বারাসতে খারাপ ফল করেছে। তা ছাড়া দলের, একাংশের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছিল। তরুণকান্তি বলেন, "আমার লক্ষ্য থাকবে সংগঠনকে মজবুত করা এবং লোকসভা ভোটে বারাসত আসনে জেতা।"