এখানেই সেতু করার দাবিতে তুলেছেন বাগনাবাসী। —নিজস্ব চিত্র।
এলাকার নদী-খালের নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে প্রতি বর্ষায় নদী-খালের জল উপচে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে জন্য দক্ষিণ বাগনা এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ভাড়কুলি খালের উপরে বড় মাপের একটি কংক্রিটের কালভার্ট তৈরি করে দেওয়া হোক। কিন্তু আজও সেই কালভার্ট তৈরি হয়নি।
প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গাইঘাটা ব্লকের ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, এ বারও বর্ষা শুরু হতেই গ্রামের মানুষের মধ্যে জলবন্দি হওয়ার আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। গাইঘাটা ব্লকের একটা বিস্তীর্ণ এলাকার জল নিকাশির বড় মাধ্যম ভাড়কুলি খাল। পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘অতীতে ভাড়কুলি খাল ছিল নদীর মতোই। নৌকা চলত। মানুষ নৌকায় যাতায়াত করতেন। পলি জমে জমে খাল এখন মজে গিয়েছে। ফলে ওই খালের জল ধারণ ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে।’’
খালের একদিকে দক্ষিণ বাগনা গ্রাম। অন্য দিকে, দক্ষিণ বাগনা মেঠোপাড়া। খাল গিয়ে মিশেছে দুই গ্রামের মাঝ বরাবর যাওয়া যমুনা নদীতে। বর্তমানে যমুনার নাব্যতা কমে গিয়েছে। ভরে গিয়েছে কচুরিপানায়। দীর্ঘদিন ধরে কচুরিপানা না তোলায় তা নদীতেই শুকিয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, নদী এখান কার্যত মরে গিয়ে ডোবার আকার নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ দাসের কথায়, ‘‘যমুনা মজে যাওয়ার কারণে খাল দিয়ে এলাকার জল বেরিয়ে যেতে পারে না। তাই ওই ভাড়কুলি খাল এখন আমাদের কাছে বর্ষার সময় আতঙ্কের। খালের দুই পাড়ে মাটি ফেলে উঁচু করে সেখানে একটি কংক্রিটের কালভার্ট তৈরি করলে আমরা বেঁচে যেতাম। বছর বছর আর আমাদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হত না।’’ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ওই খালের উপরে এখন একটি ছোট মাপের ভাঙা কালভার্ট রয়েছে। তার উপর দিয়েই এলাকার মানুষ যাতায়াত করছেন। বিপজ্জনক ভাবে তার উপর দিয়েই চলছে সাইকেল, ভ্যান, মোটরবাইক। রয়েছে গরু-ছাগল নিয়ে যাতায়াতও। এলাকার মানুষ তার উপর দিয়েই নিয়ে যাচ্ছেন গরু ছাগল। বাসিন্দারা জানালেন, শুধু দক্ষিণ বাগনা গ্রামের মানুষজনই নন, স্থানীয় গোবরডাঙা, নাইগাছি, মল্লিকপুর, ইছাপুর গ্রামের মানুষজনও গাইঘাটা বাজারে বা হাটে যাওয়ার জন্য ওই খাল পথই ব্যবহার করেন। বর্ষায় ওই কালভার্ট জলের তলায় চলে গেলে খুবই সমস্যা হয়। স্থানীয় যুবক সাত্তাউল মণ্ডলের কথায়, ‘‘উপায় নেই বলে এখন ভাঙা কালভার্ট দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। সব্জি-বোঝাই ভ্যান উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বছরের অন্য সময় কোনও রকমে চলাচল করা গেলেও বর্ষার সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।’’
এই খাল ছাড়া কি অন্য কোনও পথ নেই?
দক্ষিণ বাগনার বাসিন্দারা জানালেন, এই খালপথ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের আরও পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গোপালপুর ঘুরে গাইঘাটা বাজারে যেতে হয়। যা এলাকার চাষিদের কাছে সময়সাপেক্ষ, টাকাও বেশি লাগে। এখানকার ছেলেমেয়েদের গাইঘাটা ও জলেশ্বরের স্কুলে পড়তে যেতে হয়। বর্ষার সময়ে তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গৃহবধূ অফুজা বিবির কথায়, ‘‘বর্ষার সময় আমরা মহিলারা তো খালের অন্য দিকে যেতেই পারি না। ক্ষুদেরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ওই জল সরতে মাস দু’য়েক সময় লেগে যায়।’’ বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বর্তমানে এই কালভার্টটি প্রায় পনেরো বছর আগে ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তা সংস্কারের উদ্যোগী হচ্ছে না।
রবিয়াল মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা ক্ষোভের সুরে বললেন, ‘‘নতুন কালভার্ট হবে ওই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের বহু দিন ধরেই ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষের ক্ষোভ এতটাই যে, জনপ্রতিনিধিরা ওই এলাকা এখন কার্যত এড়িয়ে চলছেন। রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই পথ এড়িয়ে চলছেন। একই অবস্থা প্রশাসনের কর্তাদের।’’ বাসিন্দারা অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। তাঁদের সাফ জবাব, প্রশাসনের লোকজন কত দিন এ ভাবে এড়িয়ে যায় দেখা যাক। শুধু কালভার্ট তৈরি নয়, ওই খাল থেকে বাগনা মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা পিচ করার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
কিছু দিন আগে বিডিও পার্থ মণ্ডল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় গিয়েছিলেন। কালভার্টের ব্যাপারে তিননি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় কালভার্ট সত্যিই প্রয়োজন। দু’পাশে মাটি ফেলে কালভার্ট তৈরি করতে হবে। দূরত্ব ১১০ ফুটের মতো হবে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় বড় কালভার্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
এলাকায় গিয়ে ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘কালভার্ট তৈরির বিষয়টি সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জানানো হয়েছে। সেচমন্ত্রী কালভার্ট তৈরি করে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।’’