ganga sagar

Sagar Island: সমুদ্রের জলের তোড়ে সঙ্কটে কপিলমুনি মন্দির

প্রাচীন কপিলমুনির মন্দির সমুদ্র গ্রাস করেছে বেশ কয়েক বছর আগে। এখনকার মন্দিরটি পরে তৈরি হয়।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

সাগর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ০৮:২০
Share:

তছনছ: দুর্যোগে এ ভাবেই ভেঙে গিয়েছে কপিলমুনি মন্দিরের সোজাসুজি স্নানঘাটের পার। ফাইল চিত্র

কটালের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে সাগরের একাংশ। গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দির চত্বরেরও ক্ষতি হয়েছে জলোচ্ছ্বাসে। মন্দিরের সামনে সমুদ্রতটে ভাঙন ধরেছে।

Advertisement

প্রাচীন কপিলমুনির মন্দির সমুদ্র গ্রাস করেছে বেশ কয়েক বছর আগে। এখনকার মন্দিরটি পরে তৈরি হয়। কিন্তু সমুদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। গঙ্গাসাগরে ভাঙন রোধে পরিকল্পনা শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বর্তমান কপিলমুনির মন্দিরের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মন্দিরের সামনে সমুদ্রতটের পাড় ভাঙার সমস্যা দীর্ঘদিনের। ভাঙনের জেরে গঙ্গাসাগর মেলার মাঠের আয়তন ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে ১০০-২০০ ফুট এলাকা সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতট বরাবর ১ নম্বর রাস্তা থেকে ৫ নম্বর রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় সারিবদ্ধ ভাবে নারকেল গাছ পুঁতেছিল প্রশাসন। সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়ে নারকেল গাছগুলি সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের জন্য দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে পরিকল্পনা করছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে গঙ্গাসাগরের ভাঙন ঠেকাতে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ এবং রাজ্যের পুর দফতর যৌথ ভাবে কাজ শুরু করে। ম্যাকিন্টোজ় বার্ন সংস্থাকে ক্ষয় আটকানোর পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলা হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে পরামর্শের পরে চেন্নাই আইআইটির দ্বারস্থ হয় রাজ্য। গঙ্গাসাগরের ভাঙন সমস্যা কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তার পরিকল্পনা করে চেন্নাই আইআইটি। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষও সংশ্লিষ্ট ভাঙন প্রবণ এলাকার সমীক্ষায় সহযোগিতা করে। জলের তলার মাটি কী ভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, সেই রিপোর্টও প্রস্তুত করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ঠিক হয়, এর মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা দেবে রাজ্য সরকার। বাকিটা দেবে কেন্দ্র। প্রকল্পের কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।

গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “প্রতি বছর যে ভাবে গঙ্গাসাগরে সমুদ্রের পাড় ভাঙছে, তাতে এখানকার কপিলমুনি মন্দিরটি সঙ্কটে রয়েছে। ভাঙন রোধ করা না গেলে মন্দির রক্ষা করা যাবে না। ভাঙন রোধের জন্য রাজ্যের পরিবেশ দফতর এবং কেন্দ্রের কোস্টাল রেগুলেশন জ়োনের ছাড়পত্র দরকার। কিন্তু এই অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। বাকি সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।”

পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গঙ্গাসাগর ভাঙনপ্রবণ এলাকা। এর আগে ছ’বার কপিলমুনি মন্দির সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। মন্দিরের সামনে প্লাবন ভূমিকে ছেড়ে রাখার কথা। কিন্তু এখানে ভারী পরিকাঠামো গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা চলছে। তা আরও বিপদ বাড়াতে পারে। পরিবেশ সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করে তারপর পরিকল্পনা করা উচিত।”

সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “ভাঙন রুখতে পরিকল্পনা তৈরি। প্রশাসনিক অনুমোদন-সহ সবই প্রস্তুত। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সিআরজেডের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্র সরকারও এই প্রকল্পের জন্য টাকা দিতে চাইছে না। তাই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। রাজ্য সরকারের পক্ষে একা ১৪১ কোটি টাকা দিয়ে এই কাজ শুরু করা সম্ভব নয়— যদি না কেন্দ্র সাহায্য করে।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানান, আপাতত কপিলমুনি মন্দিরের সামনে ২ নম্বর রাস্তা থেকে ৪ নম্বর রাস্তা পর্যন্ত কংক্রিটের কাজ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement