সরকারি প্রকল্প থেকে পরিস্রুত জলের জোগান শুরু হওয়ায় তাঁরা বাড়ির নলকূপ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু নোদাখালির আর্সেনিক-মুক্ত জল প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
সরবরাহ প্রকল্পের কাছে ডোঙারিয়ায় জল সরবরাহের একটি বড় পাইপের জোড় ভেঙে যাওয়ায় শনিবার বিকেল থেকে নোদাখালির ওই প্রকল্পের জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। আর্সেনিকের বিষ থেকে বাঁচতে বজবজ, বিষ্ণুপুর, বারুইপুর, সোনারপুর-রাজপুর এলাকার বাসিন্দারা বাড়ির নলকূপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাঁদের একমাত্র ভরসা ছিল নোদাখালির আর্সেনিক-মুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চৈত্রের গরমে প্রবল জলকষ্টে পড়েছেন বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন।
জল না-পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। জলের দাবিতে পথে নামা জনতার হাতে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের হেনস্থা হতে হয়েছে। রবিবার সংশ্লিষ্ট এগ্জকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণ দাস বলেন, “পাইপের খুলে যাওয়া জোড় মেরামতির কাজ চলছে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওখানে কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ আজ, সোমবার জল সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তারা।
কর্তারা মেরামতির আশ্বাস দিলেও প্রকল্পের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি করেছেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। শনিবার দুপুরের কিছু পরে ডোঙারিয়ার রাস্তার ধারে বিশাল মোটা পাইপ থেকে তোড়ে জল বেরোতে দেখে স্থানীয় লোকজনই জল প্রকল্পের দফতরে খবর দেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই দু’ঘণ্টা লাগিয়ে দেন। তত ক্ষণে রাস্তাঘাট জলে থইথই। জল ঢুকে পড়েছে কোনও কোনও বাড়ির ভিতরেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরো প্রকল্পটিই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিন তিনেক আগেও এক বার জল-বিভ্রাটের মুখে পড়তে হয়েছিল। সে-বার ওই প্রকল্পের জল সরবরাহ বন্ধ ছিল একটা গোটা দিন। প্রকল্পের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘দিন তিনেক আগে প্রকল্পের যন্ত্রাংশ মেরামত করা হয়েছিল। তার আগে আমরা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে আগাম চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু শনিবার যা হয়েছে, তার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।”
নোদাখালির ওই প্ল্যান্ট থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’টি পুরসভা (বারুইপুর ও রাজপুর-সোনারপুর) ছাড়াও আটটি ব্লকে পানীয় জল সরবরাহ হয়। সেগুলি হল বিষ্ণুপুর এক ও দুই, বজবজ দুই, জয়নগর এক, জোকা এক ও দুই, মগরাহাট-২ এবং ভাঙড় এক নম্বর ব্লক।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সমস্যাটি সাময়িক বলে এর গুরুত্ব লঘু করতে চাইলেও ভুক্তভোগী মানুষের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। দু’টি পুরসভা এবং আটটি ব্লকে নোদাখালি প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করা জল ধরে রাখার জন্য ৬৬টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক আছে। কিন্তু কোনও ট্যাঙ্কেই পর্যাপ্ত জল মজুত থাকছে না। বিশ্বনাথ দে নামে আমতলার এক বাসিন্দা বলেন, “এক মাস ধরে জলকষ্ট চলছে। বাড়ির নলকূপ তুলে দিয়েছি। এখন প্ল্যান্টের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুকুরের জল ফুটিয়ে খেতে হচ্ছে। সম্পন্ন মানুষজন জল কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ বাসিন্দারা সঙ্কটে পড়েছেন।”
বারুইপুর এবং রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় নির্বাচন আসন্ন। শনিবার রাতেই আমতলা, বারুইপুর, জয়নগরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে বিক্ষোভ সামলাতে হয় পুলিশকে। দুই পুরসভা এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকলে ভোটের মুখে কী ভাবে তার সামাল দেওয়া যাবে, সেটাই ভাবাচ্ছে শাসক দলের কাউন্সিলরদের।