Arabul Islam

জামিন পেয়েও তৃণমূলে ‘ব্রাত্য’ আরাবুল! ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’র নাম সরল পঞ্চায়েত সমিতি থেকে

অপরাধের মামলায় জামিন পাওয়ার পর বুধবারই জেল থেকে বেরোনোর সম্ভাবনা ভাঙড়ের তাজা নেতা আরাবুল ইসলামের। তিনি কি আর ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে যাবেন? সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:২১
Share:

আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

৬ বছর পর ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে ‘গৃহহীন’ আরাবুল ইসলাম। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সরানো হল ভাঙড়ের তাজা নেতার ‘নেমপ্লেট’! সভাপতির ঘরে এখন সহ-সভাপতি সোনালি বাছাড় এবং বিধায়ক শওকত মোল্লা-ঘনিষ্ঠ খইরুল ইসলামের নাম। বস্তুত, অপরাধের মামলায় জামিন পাওয়ার পর বুধবারই জেল থেকে বেরোনোর সম্ভাবনা ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’র। তিনি কি আর ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে যাবেন? সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

গত সপ্তাহে প্রকাশ্য সভা থেকে আরাবুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তৃণমূলের ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত। তিনি জানান, দলেরই এক পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক। সে কথা খোদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি শওকতের। শুধু তা-ই নয়, নিজের ছেলে হাকিমুলকে পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাইয়ে দেওয়া, প্রধান করানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা তোলাবাজির অভিযোগ তোলেন আরাবুলের বিরুদ্ধে।

প্রায় পাঁচ মাস জেলবন্দি থাকার পর জামিন মঞ্জুর হয়েছে আরাবুলের। যদিও তার জামিন নিয়ে নিরুত্তাপ ভাঙড়। কোথাও দলীয় কর্মীদের উচ্ছ্বাস বা বিজয় মিছিল নেই। তার মধ্যে সরে গেল নামফলক।

Advertisement

২০০৮ সালে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। সভাপতি হন আমিনা বেগম বিশ্বাস। আরাবুল তখন ভাঙড়ের বিধায়ক। তখন থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতেই ছিল তাঁর অফিসঘর। বিধায়ক পদ খুইয়ে ২০১৩ সালে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন আরাবুল। তখন আরাবুলের নামফলক লাগানো হয় ঘরের সামনে। আধুনিকীকরণ হয় ওই ঘরের। ২০১৮ সালে নিজে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হলেও ওই ঘর ছাড়েননি তৃণমূল নেতা। ২০২৩ সালে আবার সভাপতি হন আরাবুল। অফিস সেই একই ছিল। কিন্তু এখন থেকে সেই অফিসে বসছেন সহ-সভাপতি সোনালি বাছাড়। তিনি এখন আরাবুলের চেয়ারে বসছেন। তাঁর পাশে ওই ঘরে বসার বন্দোবস্ত হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনকারী এবং আরাবুল-বিরোধী বলে পরিচিত খইরুল ইসলামের। জনসমক্ষে শওকত দাবি করেন, এই খইরুলকেই খুন করার ছক কষেছিলেন আরাবুল।

ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুলের বিরুদ্ধে খুন-সহ ৯টি মামলা রুজু হয়েছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে গ্রেফতার করে উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ। তার পর পোলেরহাট, ভাঙড় থানা এলাকায় বেশ কয়েকটি ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে নাম জড়ায় আরাবুলের। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিক বার তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন আরাবুল। এমনকি, তাঁর স্ত্রী জাহানারা বিবিও স্বামীর বিরুদ্ধে কী কী মামলা রয়েছে জানতে চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন। কিন্তু আরাবুলের জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর তাঁর ছেলে হাকিমুল ইসলাম থেকে তাজা নেতা-ঘনিষ্ঠ কেউই কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইছেন না।

আরাবুল জেলে থাকার সময়ই ভাঙড়-২ ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক পদ খুইয়েছেন। লোকসভা ভোটে আরাবুলহীন ভাঙড়ে শওকতের নেতৃত্বে তৃণমূল ভাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। তার পর গত ৯ জুন ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সোনালিকে কার্যকরী সভাপতি করা হয়। জামিন মেলার পর আরাবুলের নামের বোর্ড খুলে ফেলা নিয়ে শওকতকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ কিন্তু তাজা নেতার ‘নেমপ্লেট’ সরে যাওয়ায় ভাঙড়ের হাওয়ায় ভাসছে একটিই প্রশ্ন, এ বার কি তৃণমূলে আরাবুলের রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement