ভিড়: নিহত কাউন্সিলর অনুপম দত্তের শেষযাত্রায় দলীয় সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ঢল। সোমবার, পানিহাটিতে। নিজস্ব চিত্র।
বছর দুয়েক আগে এক বিজেপি নেতাকে খুনের ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ভাড়াটে খুনি। কিন্তু তাদের পিছনে কে, জানা যায়নি আজও। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতার হত্যাকাণ্ডেও ধৃত ভাড়াটে খুনি। আসল ‘মাথা’ কে বা কারা, আজও অজানা। রবিবার পানিহাটির তৃণমূল কাউন্সিলরকে গুলি করে খুনের ঘটনাতেও ধৃত ভাড়াটে খুনি কার লোক, সেই তথ্য কোনও দিন সামনে আসবে কি না— তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশেরই একাংশ।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, পিছন থেকে হেঁটে এসে স্কুটারে বসা তৃণমূল নেতা অনুপম দত্তকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করছে এক দুষ্কৃতী। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁকে এমন নৃশংস ভাবে খুন হতে দেখে শিউরে উঠেছেন রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তা। প্রশ্ন উঠেছে, কতটা বেপরোয়া হলে এ ভাবে হেঁটে এসে গুলি করতে পারে কেউ! ঘটনার পরেই এক দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সে এক জন ভাড়াটে খুনি। কিন্তু যে বা যারা তাকে পাঠিয়েছিল, তাদের পরিচয় সামনে আসবে কি না, প্রশ্ন এখন সেটাই।
পুলিশেরই একাংশের মতে, ২০২০ সালে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে খুনের পরে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ন’জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। ওই ধৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ভাড়াটে খুনি, বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী, জেলবন্দি সুবোধ সিংহের শাগরেদ। এলাকার এক প্রভাবশালী নেতার দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। কিন্তু ঘটনার দেড় বছর পরেও নেপথ্যে কে বা কারা, তা জানা যায়নি। গত বছর মঙ্গলকোটে তৃণমূল নেতা অসীম দাসকে খুনেও ধরা হয়েছিল ভাড়াটে খুনি-সহ মোট সাত জনকে। তদন্তে উঠে আসে, এলাকা দখল নিতেই ওই খুন। কিন্তু অভিযোগ, ভাড়াটে খুনির পিছনে আসল মাথা কে, তা খুঁজে দেখা হয়নি। জানুয়ারিতে নোয়াপাড়ার তৃণমূল নেতা সুশান্ত মজুমদারকে খুনে তিন জন ধরা পড়লেও মূল চক্রীর নাগাল মেলেনি।
এই তিনটি ঘটনাই শুধু নয়, রাজ্যে একাধিক খুনের মামলায় মূল চক্রী পর্যন্ত পুলিশের হাত পৌঁছচ্ছে না বলেই অভিযোগ। এ জন্য রাজ্য পুলিশের নিচুতলার পুলিশকর্মীরা দায়ী করছেন শীর্ষ কর্তাদের। তাঁদের মতে, তদন্ত শুরু হলে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্তদেরই শুধু ধরা হচ্ছে। কিন্তু কার বা কাদের অঙ্গুলিহেলনে এই খুন, প্রকাশ্যে আসছে না। ফলে এমন ঘটনা ঘটছে বার বার। বেপরোয়া ভাবে প্রভাবশালীরা টাকা দিয়ে নিজের পথের কাঁটা সরিয়ে দিয়ে বহাল তবিয়তে থাকছেন বলে অভিযোগ।
তবে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, পুলিশকে দেওয়া নির্দেশ মতোই কাজ করা হয়। কোনও অপরাধের গোড়া পর্যন্ত যেতে নির্দেশ দেওয়া হলে তাঁরা সেটাই করেন। কিন্তু সমস্যা হল, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে যাতে না বেরিয়ে আসে, সে দিকেই সকলের বেশি নজর থাকে। তাই অপরাধে সরাসরি যুক্তদের গ্রেফতার করেই তদন্ত শেষ করে পুলিশ।