Antiquities unearthed

চাষের কাজে কোপ দিতেই মিলল প্রত্নসামগ্রী

ইতিহাস বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আদিগঙ্গাকে কেন্দ্র করে জলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল একসময়। শ্রীচৈতন্য নীলাচল যাত্রা করেছিলেন এই পথেই।

Advertisement

সমীরণ দাস 

জয়নগর শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৬
Share:

মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয়েচে এরকম বহু জিনিস। নিজস্ব চিত্র।

কিছুদিন আগে জয়নগরের জাঙ্গালিয়া পঞ্চায়েতের নমাজগড় এলাকায় চাষের কাজের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়েছিলেন কিছু চাষি। মাটিতে কোদালের কোপ পড়তেই বেরিয়ে আসে মাথার খুলি, টেরোকাটোর জিনিসপত্র, পাথরের টুকরো-সহ নানা প্রত্নসামগ্রী। প্রত্নতত্ত্ব গবেষকদের অনুমান, এই সব জিনিস প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, মাটি খোঁড়ার সময়ে মাথার খুলি মিলতেই ‘কঙ্কাল’ উদ্ধার হয়েছে বলে শোরগোল পড়ে এলাকায়। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশে এসে খুলিটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ওই কঙ্কালের সঙ্গেই আরও কিছু টেরাকোটার জিনিসপত্র এবং নানা পাথরের টুকরোও পাওয়া যায় মাটির নীচ থেকে। প্রাথমিক ভাবে সে সব নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তেমন উৎসাহ ছিল না। তবে, খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় আসেন প্রত্নতত্ত্ব গবেষকরা। জিনিসগুলি খতিয়ে দেখে তাঁরা অবাক হন।

প্রত্নতত্ত্ব গবেষক দেবীশঙ্কর মিদ্যা বলেন, “এই সব জিনিস ৭০০ থেকে দু’হাজার বছরের পুরনো। দেখে মনে হচ্ছে শুঙ্গ, কুষাণ যুগের জিনিস। এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে। ওই জায়গায় খোঁজ করলে আরও এ রকম জিনিস মিলতে পারে।”

Advertisement

ইতিহাস বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আদিগঙ্গাকে কেন্দ্র করে জলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল একসময়। শ্রীচৈতন্য নীলাচল যাত্রা করেছিলেন এই পথেই। তারও আগে যে এই পথে যাতায়ত ছিল, তারও প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন সময়। গবেষকদের একাংশ মনে করছেন, ওই এলাকায় আদিগঙ্গার ঘাট ছিল। সেই সূত্রেই এই সব জিনিসপত্র মিলতে পারে। জনপদ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। প্রত্নতত্ত্ব গবেষক উজ্জ্বল সর্দার বলেন, “ওই এলাকার কাছেই ঢোসা, তিলপিতে এর আগে কুষাণ যুগের নিদর্শন মিলেছে। জেলার একাধিক এলাকা থেকেই মিলেছে। দু’হাজার বছর আগে এই এলাকায় জনপদ ছিল।” গবেষকদের একাংশ আবার মনে করছেন, এই সব জিনিস মধ্যযুগেরও হতে পারে।

কিন্তু অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র সংরক্ষণেও তেমন উদ্যোগ নেই। ওই এলাকায় আরও খোঁড়াখুঁড়ি নিয়েও তেমন পদক্ষেপ করা হয়নি। উদ্ধার হওয়া খুলিটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তা নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত বলেই মত গবেষকদের।

বারুইপুরের মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেন বলেন, “এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য এখনও মেলেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজি (নৃতত্ত্ববিজ্ঞান) বিভাগের প্রধান সুব্রতশঙ্কর বাগচী বলেন, “ওই এলাকায় সেই সময়ের নিদর্শন মেলা অসম্ভব নয়। সে রকম হলে প্রশাসনকে আরও সতর্ক হতে হবে। এ সব জিনিস থানার মালখানায় পড়ে থাকার কথা নয়। রুটিন ময়নাতদন্তেও কাজ হবে না। পুরোটাই খতিয়ে দেখা দরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement