চোখ-এড়িয়ে: এ ভাবেই কেটে ফেলা হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র
নদীর চরের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল কেটে তৈরি হচ্ছে বেআইনি সব মেছোভেড়ি। এর ফলে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষের। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, চোরাগোপ্তা ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলায় প্রতিমুহূর্তে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। একদিকে যেমন নদী বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সম্প্রতি বাসন্তী ব্লকের ভরতগড় পঞ্চায়েতের আনন্দবাদ মৌজার মাতলা নদীর চরের কয়েকশো বিঘা ম্যানগ্রোভ জঙ্গল কেটে তৈরি হচ্ছে বেআইনি মেছোভেড়ি। গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় ম্যানগ্রোভ গাছ কেটে বেশ কয়েকটি জেসিপি মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে মেছোভেড়ি। অভিযোগ, তৃণমূলের বেশ কিছু নেতার মদতে এলাকারই কয়েক জন অসাধু ব্যক্তি ওই ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে তৈরি করছেন বেআইনি মেছোভেড়ি। স্থানীয় লোকজনও জ্বালানি কাঠের জন্য ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করছেন। অনেকে আবার ম্যানগ্রোভ কেটে কাঠ চুরি করে বিক্রি করে দিচ্ছে।
দিন কয়েক আগে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দু’টি জেসিপি মেশিন আটক করা হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়। ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে ওই সব অসাধু চক্র। গত দু’দিন ধরে তারা আবার তিন-চারটি জেসিপি মেশিন লাগিয়ে গাছ কাটছে বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘এর আগে আমি পুলিশকে বলেছিলাম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। দু’টি মেশিন আটক করা হয়েছিল। তারপরে আবারও এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ সুন্দরবনের মাতলা, বিদ্যা, গোমর, হোগল নদীর চরে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়েছিল সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ।
বনসৃজন প্রকল্পে বিভিন্ন পঞ্চায়েত বছরের নানা সময়ে নদীর চরে গাছ লাগায়। আয়লা পরবর্তী সুন্দরবনে বিভিন্ন সময়ে সরকারি উদ্যোগে গাছ লাগানোর প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সেই গাছ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয় বলে অভিযোগ। আবার ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করার মতো লোকেরও অভাব নেই। রাতের অন্ধকারে ম্যানগ্রোভ কেটে কোথাও কোথাও গজিয়ে উঠছে বেআইনি মেছোভেড়ি। পরিবেশবিদেরা মনে করেন, এ ভাবে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা হলে সুন্দরবনের নদী বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে আয়লার মতো জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় তলিয়ে যাবে। বাসন্তীর আনন্দবাদ গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মাতলা নদীর চরের ম্যানগ্রোভ গাছ কেটে জেসিপি মেশিন দিয়ে মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে বেআইনি মেছোভেড়ি। স্থানীয় নেতাদের মদতেই এ সব করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। এ ভাবে গাছ কাটার ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল।’’ ভরতগড় পঞ্চায়েতের প্রধান নলিনীকান্ত সর্দার বলেন, ‘‘ওই এলাকায় ঠিক কি হচ্ছে বলতে পারব না। তবে এই ঘটনার সঙ্গে দলের একাংশ জড়িত বলে শুনেছি। পুরো বিষয়টি নিয়ে দলের উপর মহলে জানিয়েছি। এ ধরনের কাজ সমর্থন করি না।’’