এড়ানো গেল না ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
শাসকদলের প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ হয়েছে শুক্রবার। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হুগলির নানা প্রান্তে শাসকদলের অন্দরে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে। দু’-একটি ক্ষেত্রে তা প্রকাশ্যেও চলে এসেছে। বিধানসভা ভোটে বিরোধী জোটের খাঁড়া তো রয়েছেই, দলের অন্দরের এই ক্ষোভও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে।
প্রয়াত জনপ্রিয় সাংসদ আকবর আলি খন্দকারের স্ত্রী স্বাতী খন্দকারকে এ বারেও চণ্ডীতলা থেকেই প্রার্থী করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বিধায়কের কাজকর্ম নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ কম ছিল না। এলাকায় না-আসা, দলের কর্মসূচিতে যোগ না-দেওয়ার পাশাপাশি বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচ করতে না পারার অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ছিল তাঁর আত্মীয় এবং স্নেহভাজনদের দুর্নীতির অভিযোগও। এই আবহে বিধায়কের বকলমে দলের কাজ সামালাচ্ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সুবীর মুখোপাধ্যায়। জেলা নেতৃত্ব বা স্থানীয় স্তরে দলের অনেকেই আশা করেছিলেন, সুবীরবাবুর ভাগ্যে এ বার শিঁকে ছিঁড়বে। কিন্তু তা হয়নি।
সুবীরবাবুকে প্রার্থী করার দাবিতে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ-মিছিল হয় চণ্ডীতলায়। কয়েকটি জায়গায় দলীয় পতাকা নামিয়ে দেন ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা। শনিবার সন্ধ্যাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সুবীরবাবু দলের ছেলেদের সংযত করার চেষ্টা করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ দিন সন্ধ্যায় কলাছড়ায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক জড়ো হন। বুকে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে স্বাতীদেবীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষে চণ্ডীতলা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য আসফার হোসেন বলেন, ‘‘সুবীরবাবু দক্ষ সংগঠক। তাঁর নেতৃত্বে আমরাই তো পাঁচ বছর বিধায়কের কাজ দেখাশোনা করলাম। আর এখন তাঁকে প্রার্থী করা হল না? দল জেনেবুঝেই এই আসনটি কঠিন করে ফেলল।’’ পক্ষান্তরে, স্বাতীদেবী বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ নিয়ে দাঁড়িয়েছি। কে কী করলেন, সেটা তাঁর বা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’
জেলার আর এক গুরুত্বপূর্ণ আসন সিঙ্গুরেও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য়ের ফের টিকিট পাওয়া মানতে পারছেন না স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে উপস্থিত এক নেতার কথায়, ‘‘মাস্টারমশাইয়ের বয়স এখন ৮৮ বছর। উনি মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় সাধারণ মানুষ ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ওঁকে প্রার্থী করার আগে এই বিষয়গুলি ভাবনাচিন্তা করা উচিত ছিল।’’ বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দুধকুমার ধাড়াও একই সুরে বলেন, ‘‘চার বছর বিধায়ককে এলাকায় দেখা যায়নি। ওঁর ফের প্রার্থী হওয়া আমরাই মানতে পারছি না। মানুষ মানবেন কী করে?’’ রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা তিনি পালন করবেন।
প্রাক্তন পুলিশকর্তা রচপাল সিংহকে এ বারেও তারকেশ্বরের প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মমতা। সল্টলেকের বাসিন্দা রচপাল এ দিনই দুপুরে তারকেশ্বরে আসেন। কিন্তু এলাকার দাপুটে নেতাদের কয়েক জন তাঁর সঙ্গে দেখা করতেও আসেননি। ক্ষোভ রয়েছে পাণ্ডুয়ায় ফুটবল-তারকা রহিম নবিকে প্রার্থী করা নিয়েও। এ দিনই সেখানকার বিক্ষুব্ধ চার নেতা বৈঠকে বসেন। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ওই নেতাদের অনুগামীরা দলীয় প্রার্থীর হয়ে ভোট করা থেকে বিরত থাকার দাবি জানান। দলের স্থানীয় নেতাদের বুঝিয়ে নিজের হয়ে মাঠে নামানোই এখন নবির সামনে চ্যালেঞ্জ। মুজফ্ফর খানকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে চাঁপদানি কেন্দ্রে। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান, প্রার্থী ঠিক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সবাই তা মানতে বাধ্য। প্রথমে একটু ক্ষোভ থাকে। পরে তা ঠিক হয়ে যায়।