দেবতনু মণ্ডল
কিশোর ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে তখনও চোখের জল শুকোয়নি বাবা-মায়ের। তারই মধ্যে বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন, ছেলের চোখ দান করতে হবে। সেই মতো ছেলে দেবতনু মণ্ডলের (১৭) চক্ষুদানের ব্যবস্থা করলেন সিদ্ধেশ্বর।
বসিরহাটের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ষষ্ঠীবটতলায় থাকেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সিদ্ধেশ্বর। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবতনুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নিজের ঘর থেকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসক। কেন ছেলেটি এমন সিদ্ধান্ত নিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিবারটি জানিয়েছে, সকালেও বাবার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে দেবতনু। তার দিদি ডাক্তারি ছাত্রী। কাকা চিকিৎসক। সম্ভ্রান্ত পরিবারটিকে এক ডাকে চেনেন এলাকা মানুষ। সেই পরিবারে এমন বিপর্যয়ে শোকস্তব্ধ অনেকেই।
চোখের জল মুছতে মুছতে সিদ্ধেশ্বর হঠাৎই বলেন, ছেলের চোখ দান করতে হবে। অনেকে প্রথমে গুরুত্ব দেননি সে কথার। শোকের মধ্যে বাবা ভেবেচিন্তে বলছেন কিনা, তা নিয়েই যখন চাপা গলায় আলোচনা চলছে, তখন সিদ্ধেশ্বর জোর গলায় জানিয়ে দেন, ছেলের চোখ দানের জন্য যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সদ্য সন্তানহারা বাবার কথা শুনে হইচই পড়ে যায়। চক্ষুদান নিয়ে কাজ করে বসিরহাটের একটি সংস্থা। যোগাযোগ করা হয় তাদের সঙ্গে। সেই মতো বৃহস্পতিবার চোখ সংরক্ষণের পরে পাঠানো হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে।
স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বামী অমিত মজুমদার বলেন, ‘‘প্রবল শোকের মধ্যে সকলকে হতবাক করে দিয়ে সিদ্ধেশ্বরবাবু ছেলের চোখ দানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেন। এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ বসিরহাট থানার আইসি প্রেমাশিস চট্টরাজও বলেন, ‘‘মৃত সন্তানের শোক সামলে এক জন বাবার পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না।’’
চোখের জল মুছে সিদ্ধেশ্বর বলেন, ‘‘ছেলেকে তো আর কোনও দিন ফিরে পাব না। তবু ওর চোখ দু’টো অন্যের চোখে বেঁচে থাকুক।’’
চক্ষুদানকারী সংস্থা সেবায়নের সদস্য সত্যজিৎ নাথ, তপন দে, মদন সাহা বলেন, ‘‘বসিরহাট জেলা হাসপাতালের মর্গ থেকে দেবতনুর চোখ সংগ্রহ করা হয়েছে। পরিবারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করল।’’