এ ভাবেই পরিবার নিয়ে বাঁধে বসবাস। নিজস্ব চিত্র
আমপান ভিটেমাটি হারিয়ে এখনও নদীর বাঁধে ঝুপড়ি বেঁধে বাস করছে কয়েকটি পরিবার। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি পঞ্চায়েতের বাইনারা গ্রামে চোখে পড়বে এই পরিস্থিতি।
আমপানের রাতে বাইনারায় ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়। রূপমারি ও বিশপুর পঞ্চায়তের একাধিক গ্রামের মানুষ বাড়ি ছেড়ে রাস্তা ও বাঁধের উপরে আশ্রয় নেন। প্রায় তিন মাস বাইনারা গ্রামের ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে ঝুপড়িতে ছিল শ’খানেক পরিবার। একে একে অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। তবে এখনও নদী বাঁধে রয়ে গিয়েছে ৯টি পরিবার।
নদীর যে অংশে বাঁধ ভেঙেছিল, সেই জায়গায় বাঁধ দেওয়া যায়নি। তাই কয়েকশো ফুট দূর থেকে রিং বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে নদী গর্ভে চলে গিয়েছে ৬টি পাকা বাড়ি ও ৭টি মাটির বাড়ি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ বিঘার বেশি জমিতে এখন জোয়ার-ভাটা খেলছে। মাটির বাড়িগুলোর আর অস্তিত্ব নেই। পাকা বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও তার ভিতরে নদীর পলি জমছে। নদীগর্ভে চলে যাওয়া বাড়িগুলির বাসিন্দারাই বাইনারা খেয়াঘাটের পাশে নদীর বাঁধের উপরে লাইন দিয়ে ঝুপড়ি করে আছেন।
এমনই একটি ঝুপড়িতে থাকেন দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন অনিতা সর্দার আর তাঁর স্বামী। অনিতা জানান, তাঁদের মাটির বাড়ি ছিল ভাঙা বাঁধের পাশেই। সেই বাড়ির এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই। স্বামী তুফান তামিলনাড়ুতে শ্রমিকের কাজ করতেন। লকডাউনে কাজ হারিয়ে বাড়ি চলে এসেছেন। গ্রামে কোনও কাজ নেই। তাই সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা। আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকাও জোটেনি। অনিতা বলেন, “ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই। তাই আবেদন করতে পারিনি। এখন অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করছি। জানি না আবেদন করতে পারব কিনা। এ ভাবে ঝুপড়িতে থাকতে খুবই কষ্ট হয়। আমরা মুখ বুজে গরম সহ্য করলেও বাচ্চাদের কষ্ট দেখতে পারি না। ঘুমোতেই পারে না ওরা।” স্থানীয় বাসিন্দা সনাতন সর্দার বলেন, “জীবনে কখনও বাড়ি ছেড়ে বাঁধে বাস করতে হয়নি। এখানে পানীয় জলের খুব সমস্যা। এ ছাড়া স্নান করা, বাসন মাজা বা শৌচকর্ম ও অন্য কাজে খুব সমস্যা হচ্ছে। যত পুকুর ছিল আশেপাশে সব নদীর নোনা জলে ভরে আছে। সেই নোনা জলই ব্যবহার করতে হচ্ছে।”
ঘর ছাড়া সব মানুষগুলোর মুখে একটাই কথা, বাড়ি ফিরতে চাই। তাঁরা চাইছেন, যেখানে পুরনো বাঁধে ছিল, সেখানেই কংক্রিটের বাঁধ হোক। তাঁদের ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। শুধু যে কয়েকটি বাড়ি নদী গর্ভে গিয়েছে তা নয়। অনেকের চাষের জমি ছিল এই নদী বাঁধের পাশে। তাঁরাও চাইছেন চাষের জমি ফিরে পেতে।
কয়েক দিন আগে হিঙ্গলগঞ্জের নতুন বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি এই মানুষজনের সঙ্গে দেখা করেন। স্থানীয়দের দাবি শোনেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।