শহরকে বানভাসি হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে দখলমুক্ত করতে হবে নিকাশি নালা। সে দিকে তাকিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে বনগাঁ পুরসভা ও স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন।
একে তো কচুরিপানায় অবরুদ্ধ ইছামতী, তার উপরে শহরে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা নিকাশি নালা। তা-ও আবার কোথাও জবরদখলের জেরে অবরুদ্ধ তার গতি। যার জেরে ফি বছর অল্প বৃষ্টিতেই জলে ভাসে বনগাঁ শহরের একটা বড় অংশ। আর ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। গত বছর বর্ষায় একদিনের ভারী বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও হাঁটু সমান জলে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সড়কে বুক সমান জল দাঁড়িয়ে ছিল। যান চলাচল পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
শহরের নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম ইছামতী নদী। সেই নদী নাব্যতা হারিয়ে কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে বহু দিন। শহর এলাকার বর্ষার জমা জল নিকাশির নালার মাধ্যমে ইছামতী এসে পড়ার কথা। কিন্তু সেই জল এখন নদী পর্যন্ত আসে না। তার অন্যতম কারণ, নিকাশি নালা দখল করে সরকারি জায়গায় গড়ে উঠেছে নির্মাণ। আবার কোথাও নিকাশি নালার উপরে গজিয়ে উঠেছে দোকানপাট, বাড়িঘর। ফলে পুসভার পক্ষ থেকে নাকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করাও সম্ভব হয় না।
সরকারি এলাকায় জবরদখল সরিয়ে নিকাশি নালাগুলিকে জল চলাচলের উপযুক্ত করার ব্যাপারেই এ বার উদ্যোগ করা হচ্ছে বনগাঁয়। কী ভাবে নালাগুলি পুরনো অবস্থায় ফেরানো যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে শনিবার বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় নিজের দফতরে বৈঠক করেছেন। উপস্থিত ছিলেন রেল, জাতীয় সড়ক, পুলিশ ও পুরসভার প্রতিনিধিরা।
রবিবার মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এলাকায় গিয়ে সরেজমিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য জানান, ভারী বৃষ্টিতে শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বেশ কিছু এলাকায় নিকাশি নালা দখল হয়ে গিয়েছে। ফলে জমা জল বের হতে পারে না। নালা দখল করে সেখানে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। বেআইনি ওই নির্মাণকারীদের সময় দেওয়া হয়েছে নির্মাণ সরিয়ে নিতে। না হলে আইনগত পদক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন পুরপ্রধান।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ নম্বর রেলগেট এলাকা থেকে বনগাঁ স্টেশন পর্যন্ত এলাকায় নিকাশি নালা দখল করে খাবারের দোকান, মিষ্টির দোকান, কাঠের দোকান তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৫১। এ ছাড়া, দোকানের নোংরা আবর্জনা নালায় ফেলার ফলেও তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বিশ্বকর্মা সিনেমা হলের কাছে একটি কালভার্টের উপরেও বেআইনি নির্মাণ গড়ে উঠেছে। ২ নম্বর রেলগেট থেকে ১ নম্বর রেলগেট যাওয়ার পথের নয়ানজুলিও বেদখল হয়েছে। এমনকী, যশোর রোডের পাশের যে সব নয়ানজুলি দিয়ে জল বের হতো, তা মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। কোথাও আবার নির্মাণ কাজ হয়েছে। ফলে জল বের হতে পারে না। অভিযোগ, নিকাশি নালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না।
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘জবরদখলকারীদের বোঝানো হয়েছে, মঙ্গলবারের মধ্যে উঠে যাওয়ার জন্য। তা না হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। তবে অনেকেই শহরের নিকাশি ব্যবস্থার স্বার্থে নিজেরাই উঠে যেতে রাজি হয়েছেন।’’
জবরদখল উঠে গেলেই যে শহরের নিকাশির হাল পুরোপুরি ফিরবে এমনটা অবশ্য নয়। কিন্তু সাময়িক স্বস্তি মিলবে বলেই প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা। সুদীপবাবুর আশা, ‘‘নিকাশির সার্বিক উন্নতি না হলেও বর্ষায় মানুষ খানিকটা স্বস্তি অবশ্যই পাবেন।’’ এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘নতুন করে কোনও সরকারি জায়গা দখল করতে দেওয়া হবে না। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
তবে এ প্রসঙ্গেই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা না বাড়লে সমস্যার পাকাপাকি সমাধান সম্ভব নয়। ব্যক্তিস্বার্থে নালা দখল করলে আখেরে যে সকলেরই ক্ষতি, তা বুঝতে হবে।