ফন্দি: ট্রলিব্যাগ থেকে বেরা করা হয়েছে পাত। নিজস্ব চিত্র।
কাপড়ের ট্রলি ব্যাগ। ভিতরে জামা কাপড়। ওই ব্যাগের চারপাশে সোনার পাত লাগিয়ে চলছে সোনা পাচার।
ট্রলি ব্যাগের চারপাশে সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের পাত দেওয়া থাকে। ওই পাত তুলে দিয়ে সোনার বিস্কুট গলিয়ে তাতে অ্যালুমিনিয়ামের রঙ করে ব্যাগের চারপাশে বসানো হয়।
বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে পাচার হচ্ছে সোনার বিস্কুট ও সোনার বাট। এর আগে নি-ক্যাপে জড়িয়ে, কখনও আনাজ বোঝাই ব্যাগের ভিতরে, সাইকেলের রডের মধ্যে, বাইকের সিটের নীচে, এমনকী, পায়ু ছিদ্রের মধ্যেও সোনা ভরে পাচারের কৌশল নজরে এসেছে শুল্ক দফতরের। ট্রলি ব্যাগে সোনার পাত লাগানো সেই তুলনায় নতুন। পাচারকারী চক্রের পান্ডারা বাংলাদেশের ক্লিয়ারিং এজেন্টদেরও সোনা পাচারের কাজে ব্যবহার করছে বলে জানা গিয়েছে।
গত কয়েক মাসে শুল্ক দফতর বিএসএফ ও পুলিশের হাতে ধরাও পড়ছে প্রচুর সোনার বিস্কুট ও পাচারকারীরা। কিন্তু এত কিছুর পড়েও সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না সোনা পাচার।
কেন? মূলত গোপন সূত্র মারফত ছাড়া সোনার বিস্কুট ধরা সম্ভব নয় বলে মত এক শুল্ক অফিসারের। কারণ, আকারে এতই ছোট সোনার পাত বা বিস্কুট, তা নজর গলে নিয়ে যাওয়া অনেক সোজা। সীমান্তে সর্বত্র কাটাতার না থাকাও পাচারের সুযোগ বাড়ায়। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, যে কাঁটাতারের ও পার থেকে ব্যাগ ছুড়ে এ পারে ফেলা হচ্ছে। তা নজরে আসা খুবই শক্ত। তা ছাড়া, যারা ধরা পড়ছে সকলেই সোনা বহনকারী। তাদের জেরা করে মাথা পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, সোনার বিস্কুট ধরতে পুলিশেরও খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না।
পুলিশ জানায়, ‘সোর্স’রা তাদের থেকে এ বিষয়ে বিএসএফ ও শুল্ক দফতরকে বেশি ভরসা করে। তাই তারা শুল্ক দফতরকেই খবর দেয়। তবে পুলিশও সোনা পাচার আটকাতে পদক্ষেপ করছে বলে দাবি কর্তাদের।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত জাহাজে করে সোনা আসে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে তা পৌঁছয় ঢাকার বড় বাজারে। ঢাকার বড় বাজারের সঙ্গে কলকাতার বড় বাজারের একটি চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন হাত ঘুরে ঢাকা থেকে সোনা আসে কলকাতায়। এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, সোনার পাচার খুবই লাভজনক। ঢাকা থেকে এক কিলো সোনার বিস্কুট কলকাতায় পৌঁছে দিতে পারলে লাভ হয় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার মতো। ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত পাচারকারীদের মাধ্যমে পৌঁছতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা মাত্র। এই কারণেই সোনার পাচার বাড়ছে। আর তা রোধ করতে বিএসএফ, শুল্ক দফতর, পুলিশের কালঘাম ছুটছে।