ফাঁকা মাথায় বাইক চালানো। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
গত সাত দিনে পথ দুর্ঘটনায় বনগাঁ মহকুমায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখমের সংখ্যা ১৫।
বুধবার দুপুরে গাইঘাটার গোপালপুরে যশোর রোডে বাইকের সঙ্গে ছোট গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে সইফুল মণ্ডল নামে এক যুবকের। জখম হয়েছেন নিজাম মুক্তি এবং ইনজামুল সর্দার। সকলেই বাইক আরোহী। মাথায় হেলমেট ছিল না।
মঙ্গলবার রাতে বাগদার নঞ্চেপোতা এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে বাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বিশ্বজিৎ মিস্ত্রি ও মিঠুন মণ্ডল নামে দুই বাইক আরোহীর। হেলমেটহীন ছিল তাঁদের মাথাও। সোমবার রাতে বনগাঁর রামনগর রোডে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে রঞ্জিত হালদারের। রবিবার রাতে বাগদার বাণেশ্বরপুর এলাকায় কন্যাযাত্রী-বোঝাই গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় রামপ্রসাদ বিশ্বাস নামে এক সাইকেল চালকের। গোপালনগরে পথ দুর্ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়াও, ছোটখাটো দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন ১৫ জন।
সম্প্রতি বনগাঁ মহকুমায় ঘটে যাওয়া পথ দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে বেশির ভাগই বাইক দুর্ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালানো, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো, তিন জন একই বাইকে বসে বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানো— এ সবই দুর্ঘটনার মূল কারণ হয়ে উঠছে।
পর পর মৃত্যুর পরেও অবশ্য বেশির ভাগ বাইক চালকের হুঁশ ফেরেনি। হেলমেট ছাড়াই বাইক চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকালে বনগাঁ শহরের ব্যস্ততম জনপথ বাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, অনেক বাইক চালকের মাথাতেই হেলমেট নেই। চালকের মাথায় যদি বা হেলমেটের দেখা মিলছে, পিছনে বসা আরোহীর মাথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খালি। মহকুমার মধ্যে যশোর রোড, বনগাঁ-বাগদা সড়ক, বনগাঁ-চাকদা সড়ক, হেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়ক, গোপালনগর-নহাটা সড়ক, রামনগর রোড, গাইঘাটা-গোবরডাঙা সড়ক, চাঁদপাড়া-ঠাকুরনগর সড়ক— ছবিটা সর্বত্র একই রকম। মেয়ে, স্ত্রীকে বাইকে বসিয়ে হেলমেটহীন ভাবে যাচ্ছিলেন এক যুবক। বললেন, ‘‘তাড়াহুড়োয় হেলমেট আনতে ভুলে গিয়েছি।’’ বনগাঁ-চাকদা সড়কে যুবকেরা রীতিমতো বাইক রেস করে বিপজ্জনক ভাবে। সড়কের পাশে বা সড়কের উপরে ফেলে রাখা হচ্ছে ইমারতি মালপত্র। এর ফলেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। বাস, ট্রেকারের মধ্যে চলছে রেষারেষি। অটোয় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে যাতায়াত। হেলমেটহীন বাইক চালকদের বিরুদ্ধে অতীতে পুলিশ পদক্ষেপ করায় চালকদের মধ্যে হেলমেট পরার প্রবণতা বেড়েছিল। এখন ফের বেশির ভাগ বাইক চালকেরা হেলমেট ছাড়াই বাইক চালাচ্ছেন। পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো মানে দুর্ঘটনা ডেকে আনা। হেলমেট ছাড়া বাইক দুর্ঘটনা হলে মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা ৭০ শতাংশের বেশি থাকে।’’ পথ দুর্ঘটনা কমাতে দিন কয়েক আগে বনগাঁ জেলা পুলিশের তরফে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হয়। যান চালকদের সচেতন করা হয়। হেলমেটহীন বাইক চালকদের হেলমেট উপহার দেওয়া হয়। তারপরেও চালকদের একাংশ সচেতন হননি। পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা কমাতে যান চালকদের সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। হেলমেটহীন চালকদের বিরুদ্ধে এ বার কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’