লন্ডভন্ড: ট্রাকের ধাক্কায় বিপর্যয়। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
ভরদুপুরে শহরের মধ্যে ঢুকেছিল পণ্য-বোঝাই ট্রাক। যেমন হামেশাই ঢোকে। তবে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বনগাঁ শহরের রাস্তায় সেই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। মারা গিয়েছেন পথচারী এক মহিলা। জখম শিশু-সহ ১৩ জন। ভেঙেছে একটি আবক্ষমূর্তি, তোরণ।
বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায় যশোর রোডের উপরে এই ঘটনায় ট্রাক-সহ খালাসিকে আটক করেছে পুলিশ। চালক পলাতক। জখম তিন জনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিরা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ দিনের ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে, দিনের বেলায় শহরের ব্যস্ত রাস্তায় পণ্য-বোঝাই ট্রাক চলবে কেন। শহরবাসীর বক্তব্য, এমনিতেই রাস্তাঘাট সংকীর্ণ। টোটো, ভ্যান, অটোর দৌরাত্ম্যে পথ চলা দায়। তার মধ্যে ট্রাকের যাতায়াতে পথেঘাটে আতঙ্কে থাকতে হয়। এ সবের জেরে যানজট তো হয়ই, বাড়ে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যাও। অতীতেও শহরের মধ্যে দিনের বেলায় ট্রাকের ধাক্কায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভার।
এ দিনের দুর্ঘটনার পরে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতেও দিনের বেলায় শহরে ট্রাক যাতায়াত বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। বিশেষ করে স্কুল ও অফিস শুরু ও শেষের সময়ে ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হোক বলে দাবি উঠেছে।
কী ভাবে ঘটল এ দিনের দুর্ঘটনা? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লোহার কুচি নিয়ে ট্রাকটি আসছিল যশোর রোড ধরে। বনগাঁ শহরের রাখাল দাস সেতু পেরনোর পরেই ট্রাক চালক নিয়ন্ত্রণ হারায়। প্রথমে একটি সাইকেলে ধাক্কা মারে। এরপরে দু’টি টোটোতে ধাক্কা মারে।
মতিগঞ্জ এলাকায় যশোর রোডের পাশে ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। ট্রাকের ধাক্কায় আবক্ষ মূর্তিটি ভেঙে গিয়েছে। সড়কে একটি বাঁশের তোরণ ছিল। সেটিতেও ট্রাকটি ধাক্কা মারে।
সিন্টু ভট্টাচার্য নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘সিগারেটের দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখি, ট্রাকটি উন্মাদের মতো একে ওকে তাকে ধাক্কা মারতে মারতে অন্তত একশো মিটার এগিয়ে গেল। লোকজন আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করেন। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। ভয়ঙ্কর ঘটনা।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সাধনা সরকার (৪৬)। স্বামীর সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন তিনি। ট্রাক ধাক্কা মারে।
অতীতে বনগাঁ শহরে দিনের বেলায় ট্রাক দুর্ঘটনার পরে শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। অভিযোগ, সে সব নিয়ম শুধুই খাতায়-কলমে। আদতে কেউ মানে না। কোনও নজরদারিও নেই।
এ দিনের দুর্ঘটনার পরে অবশ্য পুলিশ-প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। দিনের বেলা ট্রাক বা ওভার লোডিং ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে রাতেই পুলিশ-প্রশাসন, পুরসভা, পরিবহণ দফতরের কর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘দিনের বেলা শহরের মধ্যে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
শহরবাসীর অভিযোগ, বনগাঁ আলাদা পুলিশ জেলা হয়েছে। এখানে ডিএসপি ট্রাফিক, ট্রাফিক ওসি রয়েছেন। পরিকাঠামো বেড়েছে। তারপরেও কেন বেআইনি যানবাহন এবং দিনের বেলায় ট্রাক চলবে। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে শহরের মধ্যে যশোর রোড চওড়া করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কেন্দ্র এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। তা হলে কেন রাস্তা চওড়া হবে না?’’
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, সে সব অনেক বড় ব্যাপার। তার আগে দিনের ব্যস্ত সময়ে শহরের পথে ভারী গাড়ি তো আগে নিয়ন্ত্রণ করুক পুরসভা!