সংগ্রাম: ভ্যান চালানোর রোজগারেই চলছে সংসার ও পড়াশোনার খরচ। নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষক হতে চান সুকান্ত বিশ্বাস। দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি বসিরহাট কলেজ থেকে ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে বিএসসি পাস করেছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার দেওয়ার জন্য বিএড বাধ্যতামূলক, তাই অনেক কষ্টে অর্থ সংগ্রহ করে বিএড-ও করেছেন তিনি। কিন্তু উপযুক্ত চাকরি জোটেনি।
হিঙ্গলগঞ্জ থানার পূর্ব দেউলির বাসিন্দা সুকান্ত বলেন, “গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে থাকাকালীন আমার থাকা-খাওয়ার খরচ ভ্যানচালক বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হত না। তাই কলেজে পড়ার সময়ে কাজ করে পড়াশোনার ও অন্য খরচ আমাকেই চালাতে হত।” বেশ কিছু মাস একটি ভেড়িতে রাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন সুকান্ত। দিনের বেলা কলেজে যেতেন, রাতে ভেড়ির অল্প আলোয় পড়াশোনা করতেন। একটানা বেশি দিন রাত জেগে এই কাজ করতে বেশ অসুবিধে হত তাঁর। দিনের বেলায় বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতে হত তাঁকে।
বিএড-এর খরচ জোগাড়ের জন্য কলেজের পাঠ শেষ করে বাড়ি ফিরেও দিনমজুরের কাজ শুরু করেন সুকান্ত। ২০২০ সালে বিএড পড়া শেষ হয়েছে তাঁর। এখন এসএসসি পরীক্ষা কবে হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন। সেই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় বসছেন। কিন্তু অসফল হওয়ায় সংসারের খরচ চালাতে অন্যের জমিতে চাষের কাজ থেকে শুরু করে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজও করেন সুকান্ত।
করোনাকালে সংক্রমণের ভয়ে সুকান্ত তাঁর বাবা ধীরেন বিশ্বাসকে ভ্যান নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরোতে দেন না। সুকান্ত নিজেই ইঞ্জিন ভ্যান চালান যখন ভাড়া হয়।
সুকান্ত জানালেন, তাঁর স্ত্রী-ও বিএসসি, বিএড পাস করেছেন। মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। সুকান্তর কথায়, “রোজ কাজ থেকে ফিরে যতটুকু সময় পাই, চাকরির প্রস্তুতি নিই আমরা দু’জন মিলে। আমাদের বিশ্বাস, একদিন এসএসসি পাস করে স্কুলশিক্ষক হতে পারব।”
সুকান্ত ভেবেছিলেন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলে সহজেই চাকরি পাওয়া যাবে। সংসারের হাল ধরবেন। কিন্তু তেমনটা না হওয়ায় ইদানীং মুষড়ে পড়ছেন। তবু এসএসসি-কেই পাখির চোখ করে রেখেছেন বিশ্বাস দম্পতি।
দিনমজুরির কাজে কোনও সংকোচ নেই সুকান্তর। তবে আক্ষেপ, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও কোনও চাকরি তিনি পাননি। এমনকী, গ্রামে দিনমজুরের কাজও রোজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, “বিনামূল্যে রাজ্য সরকার সরকারি চাকরি লাভের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আমার সঙ্গে দেখা করলে ওই সুবিধা যাতে ওঁরা পান, সেই ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া, আরও কী সাহায্য করা যায় দেখব।”