Barrackpore

Little Magazine: পরিচারিকার কাজ করে মৃত ছেলের পত্রিকা বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্যারাকপুরের শঙ্করী

অর্থকষ্ট সামলাতে শঙ্করী কখনও সিনেমা হলে বাদাম বিক্রি করে, কখনও গৃহপরিচারিকার কাজ করে দুই প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা ও লেখাপড়া চালিয়েছেন।

Advertisement

অমিতা দত্ত

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৪৬
Share:

শঙ্করী দাস। নিজস্ব চিত্র।

‘মেরে পাস মা হ্যায়’— দিওয়ার ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ যুগে যুগে উস্কে দিয়েছে বহু মানুষের আবেগ। কিন্তু ছেলের স্বপ্ন সফল জন্য মায়ের সেই জীবনসংগ্রাম থেকে গিয়েছে অন্তরালেই। তবে বাস্তব কখনও কখনও ছাপিয়ে যায় রূপোলী পর্দার গল্পকেও। ব্যারাকপুরের শঙ্করী দাসের কাহিনিও তেমনই। মৃত ছেলের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন এই বৃদ্ধা।

Advertisement

সাহিত্যপ্রেমী ছেলের প্রকাশ করা পত্রিকাকে টিকিয়ে রাখতে এক দশক ধরে লড়ে চলেছেন ৬৪ বছরের শঙ্করী। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এক বিএসএফ কর্মীর সঙ্গে। পরপর দুই ছেলে মারণ রোগে চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ায় মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শঙ্করীর স্বামী অবসাদের শিকার হন। চাকরিতেও ইস্তফা দেন। শুরু হয় জীবনসংগ্রামের নতুন অধ্যায়।

প্রবল অর্থকষ্ট সামলাতে শঙ্করী কখনও সিনেমা হলে বাদাম বিক্রি করে, কখনও গৃহপরিচারিকার কাজ করে দুই প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা ও লেখাপড়া চালিয়েছেন। বড় ছেলে সোমনাথ খুব ছোট বেলা থেকেই মাইল ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অধিকাংশ সময় হাসপাতালে কাটালেও তারই মধ্যে সোমনাথ এমএ পাশ করেন। তিনি ছিলেন সাহিত্যকর্মী। গৃহশিক্ষকতার উপার্জন থেকে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতে চাইতেন। শঙ্করী সে জন্য তাঁর বহুকষ্টে জমানো ৩,০০০ টাকাও দিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় সোমনাথের পত্রিকা ‘সময় তোমাকে’।

Advertisement

ছেলের পত্রিকা প্রকাশনার কাজেও শঙ্করী সাহায্য করেছিলেন পুরোদমে। প্রুফ দেখা, প্রেসে পত্রিকা ছাপতে দেওয়া, পত্রিকা মেলায় এনে বিক্রি করা, সব কাজই করতেন শঙ্করী। মা-ছেলের এই নিরলস প্রচেষ্টায় সাফল্যও এসেছিল। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে এই পত্রিকার ‘ছোটগল্পে মিথ’ সংখ্যাটিকে পুরস্কৃত করা হয়। এর পর ওই বছরই সোমনাথ মারা যান।

মারণরোগে সোমনাথ যে বেশি দিন বাঁচবেন না, সে কথা জানতেন শঙ্করী। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর স্বপ্ন মাটিতে লুটিয়ে পড়বে, এমনটা দেখতে চাননি তিনি। অসুস্থ স্বামী এবং আরও এক প্রতিবন্ধী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সোমনাথের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই শুরু হয়। আজও পরিচারিকার কাজ করে ছেলের স্বপ্নের পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছেন শঙ্করী।

তাঁর বয়স বেড়েছে। শরীরে নানা রোগ বাসা বাধতে শুরু করেছে। কিন্তু বাঁচিয়ে রেখেছেন ‘সময় তোমাকে’-কে। শঙ্করীর কথায়, ‘‘যতক্ষণ সামর্থ্য থাকবে, পত্রিকা প্রকাশ করে যাব। আমি বেঁচে থাকা পর্যন্ত ছেলের স্বপ্নও বেঁচে থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement