Charity for Friend

অসুস্থ বন্ধুকে বাঁচাতে মরিয়া কচিকাঁচার দল

রোহিতের বন্ধু আসিফ হোসেন, কাজি জাহিদুল, অরিজিৎ সেন, সরিফুল ইসলাম, জুবাইর, আশিক, ইশান মোল্লা, আফ্‌ফান, সাকিবরা ঠিক করে, বন্ধুকে সারিয়ে তুলতেই হবে।

Advertisement

নির্মল বসু 

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ১০:০২
Share:

চাঁদা তুলতে পথে নেমেছে বন্ধুরা। নিজস্ব চিত্র।

বন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুড়ে গিয়েছে গোটা শরীর। চিকিৎসার খরচ বিস্তর, সেরে উঠতেও সময় লাগবে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কচিকাঁচার দল তাই পথে নেমেছে চাঁদা তুলে সাহায্য করতে।

Advertisement

দিন কয়েক আগের ঘটনা, বসিরহাটের টাকি রোডের ধারে আবাসনের ছাদে পড়ন্ত বিকেলে সুতো কেটে উড়ে এসে পড়েছিল একটি রংচঙে ঘুড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বছর তেরোর শেখ রোহিত হক কার্নিসে ঝোলা ঘুড়িটি পাড়তে গিয়ে ছাদের পাশে থাকা হাইটেনশন লাইনের তার ছুঁয়ে ফেলে কোনও ভাবে। তড়িদাহত হয়ে ছিটকে পড়ে। তাকে বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসকেরা জানান, শরীর প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। বাঁচার সম্ভাবনাও কম।

রোহিতের বন্ধু আসিফ হোসেন, কাজি জাহিদুল, অরিজিৎ সেন, সরিফুল ইসলাম, জুবাইর, আশিক, ইশান মোল্লা, আফ্‌ফান, সাকিবরা ঠিক করে, বন্ধুকে সারিয়ে তুলতেই হবে। কলেজ পড়ুয়া সুরজ ইসলাম মণ্ডল চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন, ক্ষত সারানোর জন্য সব রকম ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে দলও তৈরি করেন। লেখাপড়ার ফাঁকে পথচারী, দোকানদার, স্থানীয় বাজার ও বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তুলতে শুরু করে পড়ুয়ারা। দু’টাকা, পাঁচ টাকা করে পঁচিশ হাজার টাকা উঠেছে কয়েক দিনের মধ্যেই।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোহিতের বাবা নেই। মা লায়লা বিবি একটি ছোট চায়ের দোকান চালান। ছেলে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সেই দোকানও ঠিক মতো খুলতে পারছেন না। এ দিকে, যেটুকু টাকা ছিল সব শেষ। সোমবার ছেলের বন্ধুদের কাছ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা পেয়ে আপ্লুত লায়লা বলেন, ‘‘আমার ছেলের জন্য এই ভাবে সাহায্য পাব কল্পনাও করিনি। গর্ব হচ্ছে ছেলেটার জন্য, ওর এমন বন্ধুরা পাশে আছে।’’

সুরজ, অরিজিতেরা বলে, ‘‘চিকিৎসকদের বলেছি, যত টাকাই লাগুক, আমরা ঠিক চাঁদা তুলে জোগাড় করব। শুধু আমাদের বন্ধুকে সুস্থ করে দিন।’’ রোহিতের প্রতিবেশী সুব্রত গায়েন বলেন, ‘‘বড়দের যেটা করার কথা, সেটা এই কিশোর বাহিনী করে দেখাচ্ছে। সমাজের জন্য এটা খুব জরুরি।’’

অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের রাজনগর শ্রীনাথগ্রাম বাণী বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র উদয়শঙ্কর পাহাড়ি ক্যানসার আক্রান্ত। চিকিৎসার খরচ জোগাতে বসত বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছেন অভিভাবকেরা। সাহায্য প্রার্থনা করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে পরিবার। এ বছরই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল ছেলেটির। পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার ঠিক আগেই কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

উদয়শঙ্করের বাবা কমলেন্দু বলেন, ‘‘সামান্য শ্রমিকের কাজ করি। বড় ছেলের কলেজের খরচ দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তাই লেখাপড়া বন্ধ। আর উদয়ের ব্লাড ক্যানসার। প্রতি দিন রক্ত দিতে হচ্ছে, সঙ্গে ওষুধপত্র। চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব। আর কোনও দিশা নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’’

ক্যানসার আক্রান্ত পড়ুয়া অবশ্য হাল ছাড়ার পাত্র নয়। তার দাবি, ‘‘এ বছর হল না, সামনের বছর উচ্চমাধ্যমিকে বসবই।’’
— সহ প্রতিবেদন: সমরেশ মণ্ডল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement