বরাত-জোরে: অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ওঁরা
অমরনাথ দর্শন সেরে বিশ্রাম নিতে সবে তাঁবুতে ঢুকেছিলেন তাঁরা। এমন সময়ে ভেসে আসে চিৎকার— ‘নিকল যাও সব লোগ’।
শুনে তড়িঘড়ি ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে আসেন ওঁরা। মুহূর্তের মধ্যে জলের তোড়ে ভেসে যায় তাঁবু। কোনও রকমে প্রাণে বাঁচেন বসিরহাটের চার পর্যটক। দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়ে আপাতত শ্রীনগরে ফিরেছেন সকলে। দ্রুত বসিরহাটে ফিরবেন বলে জানান রবিবার।
অমরনাথে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ বহু পর্যটক। মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। চোখের সামনে সেই বিপর্যয় দেখেছেন বসিরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশিস ভট্টাচার্য, মানস বসু, শ্যামাপ্রসাদ হালদার, পঞ্চানন মণ্ডলেরা।
রবিবার শ্রীনগর থেকে ফোনে জানালেন, অমরনাথ যাত্রার জন্য ৩ জুলাই পহেলগাঁও পৌঁছন। আবহাওয়া খারাপ থাকায় সে সময়ে অমরনাথ যাত্রা বন্ধ রেখেছিল স্থানীয় প্রশাসন। ৬ জুলাই তাঁরা অমরনাথের পবিত্র গুহার দিকে হাঁটা শুরু করেন চন্দনওয়াড়ি থেকে। প্রথম দিন ১২ কিলোমিটার হাঁটেন। পর দিন আরও ১৪ কিলোমিটার হেঁটে ৮ তারিখ অমরনাথ দর্শন করেন তাঁরা। সেদিনই নামে বিপর্যয়।
মানস বলেন, “অমরনাথ দর্শন সেরে পাঁচশো ফুট নীচে নেমে বিশ্রামের জন্য তাঁবু ভাড়া নিই। ওই সময় থেকে আবহাওয়া খারাপ হচ্ছিল। তাঁবুতে ঢুকে সবে একটু গা এলিয়ে বসেছি, এমন সময়ে চিৎকার ভেসে এল, নিকল যাও সব লোগ, আভি নিকলো, সব বাহার যাও। বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গুরু গুরু শব্দ হচ্ছে। বিপদ বুঝে আমরা চারজন দ্রুত ব্যাগ কাঁধে তাঁবুর বাইরে চলে আসি। দৌড়ে একটু উঁচু জায়গায় পৌছে পিছন ফিরে দেখি, আমাদের তাঁবু-সহ আশপাশের আরও কয়েকটি তাঁবু জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। একটু দেরি হলে কী হত ভেবে গা শিউরে উঠছে।”
আশিস বলেন, “ততক্ষণে চারদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গিয়েছে। চার দিকের পাহাড় বেয়ে তীব্র গতিতে ভয়ঙ্কর শব্দে নেমে আসছে জলের ধারা। আমরা রক্ষা পেলেও অনেক পর্যটকই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন। উদ্ধার কাজে সেনা নামে। এ দিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। কোনও রকমে একটা দোকান পেয়ে সেখানেই আশ্রয় নিই। পানীয় জল, খাবার কিছুই মিলছে না। সে কী ভয়ঙ্কর অবস্থা।”
তাঁরা জানান, শনিবার বেলা ১০টার পরে সেনাবাহিনী নীচে নামার অনুমতি দিতেই হাঁটা শুরু করেন। সন্ধে নাগাদ নিরাপদে নেমে আসেন।